অবতক খবর , নরেশ ভকত, বাঁকুড়া :       বাইক চালানোর সাধ সব যুবকেরই থাকে। কিন্তু বর্তমানে দু’চাকা বাইকের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। তাই সাধ থাকলেও মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে বাইক কেনার স্বপ্ন। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত নগালের মধ্যে খরচে সিটে বসে এক্সিলেটরে চাপ দিয়ে গড়গড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করে ফেলল বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের যুবক রবীন দাস কর্মকার। তাও আবার মহার্ঘ পেট্রোল ছাড়াই। বিষ্ণুপুর শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা রবীন বাড়িতে বসেই বাতিল লোহালক্কড় আর যন্ত্রপাতি দিয়ে বানিয়ে ফেলল বাইকের মিনি সংস্করণ ব্যাটারি চালিত ই-সাইকেল। যা নিয়ে দিব্যি শহরজুড়ে টহল মারছে রবীন। ওই মিনি বাইক দেখে এখন অনেকেই ইচ্ছে প্রকাশ করছেন সেই বাইক কেনার।

পেশায় হাইড্রোলিক মেকানিক রবীন দাস কর্মকার। রবীনের অভাবের সংসার। সামান্য মেকানিকের কাজ করে দিন গুজরান হয়। তবে এই দীর্ঘ লকডাউনের সময় কাজের বরাত একেবারেই ছিলনা। রবীনের বাইক কেনার স্বপ্ন সেই ছাত্রজীবন থেকেই। কিন্তু ছোট বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁকেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। তাই স্বপ্ন রয়ে গেছিল অধরা। লকডাউনের অবসরে কারিগরি বিষয়ে দক্ষ রবীনের মাথায় ঘুরতে থাকে বাইকের ভাবনা। কেমন হয় একটা সাইকেলকে বাইকের আদলে গড়ে তুললে ? কিন্তু নতুন একটা সাইকেল কেনার সামর্থ্যও যে নেই। তাই শুরু হল পুরনো লোহালক্করের আড়ত ঘুরে সাইকেলের যন্ত্রাংশ খোঁজা।

রবীনবাবু বলেন ‘বাইকের স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু মা স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে সংসার চালিয়ে মাস শেষে হাতে আর কিছুই থাকত না। লকডাউন চলার সময় আমার মাথায় আসে এই মিনি বাইক বানানোর ভাবনাটা। পুরনো পাইপ জুড়ে সাইকেলের বডিটা তৈরি করে ফেলি। চাকা থেকে মাড গার্ড সবই পুরনো জোগাড় করে তাতে মটোর এবং ১২ ভোল্টের ২ টি ব্যাটারি লাগিয়ে এই মিনি বাইক তৈরি করেছি। ব্যাটারি ২ টি ফুল চার্জ হতে ১ ইউনিটেরও কম কারেন্ট খরচা হয়। চলবে ৩০-৩৫ কিলোমিটার। পুরনো যন্ত্রাংশ দিয়ে এই মিনি বাইক বানাতে খরচ পড়ছে ১২-১৩ হাজার টাকা। এতো অল্প টাকায় বাইক চড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে এখন অনেকেই আমার কাছে আসছেন মিনি বাইক তৈরি করে দেওয়ার জন্য’।

রবীনের এখন লক্ষ এই বাইকের পেটেন্ট সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার। যাতে সরকারি সাহায্যে একটি সফল উদ্যোগ গড়ে তোলা যায়।