মঞ্চে যারা বসেছিল 

তমাল সাহা

মঞ্চে যারা বসেছিল, যারা ভূষিত হচ্ছিল তাদের প্রত্যেককে আমি চিনি। তাদের প্রত্যেকের মুখ আমি অনেকবার দেখেছি। ‌ নাটক শব্দটি সংসদ-সচিব অসংসদীয় ঘোষণা করলেও এই শব্দটি জীবন সত্য বলে আমার মনে হয়।

এই দুনিয়ায় সব শিল্পীরাই এমনকি তুমি আমি সকলেই নাটক করি। নাটক বলে আলাদা কোনো শিল্প হয় না,বলে আমার মত অভাজনের ধারণা।

নাট্য শিল্পীরা নাটক তো করবেই। নেতা কবি সাহিত্যিক গায়ক বিজ্ঞানী অর্থনীতিবিদ ইতিহাসবিদ অর্থাৎ যত বিদ ও বিশেষজ্ঞ রয়েছেন প্রত্যেকে এই নাটক শিল্পে নৈপুণ্যে পারঙ্গম। এইসব শিল্পীরা নাটকীয় কোন অনুষ্ঠান বা ভাষণ সম্পূর্ণের পর মঞ্চের যবনিকা সরিয়ে প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের সামনে উপস্থিত হন এবং মাথা নত করে বলেন, আপনারা সাধারণজনেরাই আমাদের প্রকৃত সমঝদার। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের আসল পুরস্কার। আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন। আপনারা আছেন বলেই আমরা বেঁচে আছি। হাতজোড় করে মাথা নত করে প্রেক্ষাগৃহের পর্দা পতন মুহূর্তে আবার বলেন, আপনাদের প্রণাম। এভাবে শেষ মুহূর্তে আরেকটি আবেগ মথিত নাট্য-দৃশ্যের অবতারণা করেন।

শিল্পীদের মঞ্চে মানায় ভালো। ‌ এইসব শিল্পীদের একজনকেও আমি গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বা রাণী রাসমণি রোডে প্রাকৃতিক যুগ দুর্যোগ উপেক্ষা করে অবস্থানরত মেধাসম্পন্ন নব প্রজন্ম যারা দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের শিকার তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এমন দৃশ্য দেখিনি। প্রায় ৫০০ দিন ধরে তাদের লড়াই চলছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে। এইসব শিল্পীরা এই পচাগলা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এখনো কিছু বলেননি।

তারা নীরবতার অভিনয়ে যে নিপুণ তা প্রদর্শন করেছেন মাত্র।

এইসব শিল্পীরা বুধজনেরা প্রেক্ষাগৃহে নিপুণ অভিনয় করেন, অমূল্য বক্তৃতা দেন। আমদের নিজেদের গিয়ে তাদের শিল্প নৈপূণ্য ও কারুকাজ দেখতে হয়। আমরা দর্শক, টিকিট কেটে আমরা তাদের দেখি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অবস্থান অনশন টিকিট কেটে দেখতে হয় না। তবুও তারা আসেন না কারণ তারা অভিনেতা হতে চান, দর্শক হতে চান না।

আমি তাদের পৃষ্ঠদেশ এবং হাঁটু প্রদেশ স্পর্শ করে দেখেছি, সেখানকার হাড় নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে।‌এ বিষয়ে এক অস্থি বিশেষজ্ঞ আমাকে বলেন,বয়স বাড়লে শরীরে হাড়ে ক্ষয় রোগ আসে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, মানসিক হাড় বলে কিছু আছে কি? চেতনার হাড় বলে কিছু আছে কি? তারও কি ক্ষয় হয়?

তিনি আমার স্কন্ধে তার হাতখানি রেখে বলেন , হাড়ের কারণে নয় চেতনার ও মানবিক বোধের ক্ষয় হলেই পেছনের হাড়ের ক্ষয় হয়, হেলে পড়ে, ঝুঁকে যায় সেখানে অস্থি বা হাড়ের কোন দোষ নেই।