অবতক খবর, সংবাদদাতা , নৈহাটী ::- নির্বাচনের পর থেকে বহু বিজেপি কর্মী রাজ্যে এখনো ঘরছাড়া রয়েছেন। নৈহাটিতেও বেশ কিছু বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে ভয়ে ঘর ছাড়া। নির্বাচনের সময় যখন দিলীপ ঘোষ ও বিজেপি নেতারা হুংকার দিলেন ঘরে ঢুকে মারার কথা বলছিলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঠেঙানোর কথা বলে ভয় দেখাচ্ছিলেন তখন নৈহাটি বিধায়ক পার্থও ভৌমিক বিভিন্ন মঞ্চ থেকে নির্বাচনের পর বিজেপি কর্মী নেতাদের ঘর পাহাড়া দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। পার্থ ভৌমিক জানান নির্বাচনের পর আমরা আপনাদের ঘর পাহারা দেব চিন্তা করবেন না।

তখনকার দৃষ্টিতে পার্থ ভৌমিক এর এই বক্তব্য শুনে অনেকটাই ভাল লেগেছিল। অনেকে বলেছিলেন এমন নেতাই দরকার। এখন দেখা যাচ্ছে পার্থ ভৌমিক এর সমর্থক রা বহু বিজেপি কর্মী নেতাদের ঘর পাহারা দিচ্ছেন। তাদের ভয়ে বিজেপি অনেকেই ঘরে ফিরতে পারছেন না। কারণ তাদের ঘরের সামনে বসে রয়েছে পাহারাদার।

2রা মে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে ঘরছাড়া রয়েছেন নৈহাটির বিজেপি র মহিলানেত্রী অনিন্দিতা সরকার। অনিন্দিতা দেবির জানান বিধায়ক পার্থ ভৌমিক তাকে ভরশা দিয়েছিলেন । হুমকীর জেরে ঘরে ঢুকতে ভয় হচ্ছিল । শুক্রবার বিধায়কের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি বাড়ি ফিরে আসতে বলেন। তিনি কোনো কিচ্ছুই হবে না আশ্বাস দেন। তিনি জানিয়েছিলেন শনিবার সকাল দশ বারোটা নাগাদ তিনি নিজেও তার বাড়ি আসবেন কিন্তু শুক্রবার রাতে তার বাড়ির দরজার তালা ভেঙ্গে ব্যাপক ভাবে তার বাড়িতে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলী গুন্ডাবাহিনী। ঘরের আসবাবপত্র বিছানা পাতি সবটাই লন্ডভন্ড করে দিয়েছে তারা।

পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল হয়নি, কোন কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বরং তার দিকে আবারও হুমকি এসেছে বারে বারে। অনিন্দিতা দেবির জানান বিজেপির করা জন্যই তার ওপরে একের পর এক অত্যাচার চালানো হচ্ছে। তাকে ও তার পরিবারকে এলাকায় থাকতে দেবেনা পরিষ্কার করে জানিয়েছে তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী। তিনি আরো জানান বিধায়ক পার্থও ভৌমিক ভরসা দেওয়ার পরেও তার বাড়িতে শুক্রবার রাতেই দরোজার তালা ভেঙ্গে সব কিছু জিনিসপত্র ভাংচুর করে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী। ঘরের ভেতরে সব কিছু লন্ডভন্ড করতে আক্রমণ চালানো হয়েছে।অনিন্দিতা দেবির জানান বিধায়কের মুখে মিষ্টি কথা বললেও তার পরিণতি কিন্তু অন্যরকম দেখলাম ।

একইভাবে 21 নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির জেলা সম্পাদক রামজয় সরকারের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। বারেবারে কয়েকবার বোমাবাজি হয়েছে তার বাড়িতে। দীর্ঘদিন তিনি ঘরের বাইরে ছিলেন কিন্তু বিধায়কের সঙ্গে আলোচনার পর বাড়ি ফিরলে ও তার বাড়িতে বোমাবাজির হয়েছে, হামলা হয়েছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক রাম জয় সরকার আরও জানান নৈহাটি দুই পার্থ অর্থাৎ পার্থ ভৌমিক এবং পার্থ দাসগুপ্ত একসঙ্গে ভরশা দেন যে তার বাড়িতে আর কোনরকম হামলা বা আক্রমণ হবে না।

রামজয় সরকার আরো বলেন পার্থ ভৌমিক তাকে তৃণমূলে যোগদান করার কথা জানান বিজেপি ত্যাগ করে দলে ফিরে আসতে বলেন । তিনি তাতেও রাজি হন কিন্তু তার সাথে কথা বলে বাড়ি ফিরতেই তার বাড়ি তে আবার হামলা চালানো হয়। বোমা মারা হয় দরজায়। সারা রাত ভয়ে আতঙ্কে জেগে কাটাতে হয়। রামজয় এর দাবি বিধায়ক পার্থও ভৌমিক এর দলের উপর কোন নিয়ন্ত্রন নেই। কোন তৃণমূল কর্মীরা, গুন্ডা বাহিনী তার কথা আর শুনছেন না। তিনি বলেন যদি এমন না হয় তাহলে নিশ্চয়ই বিধায়ক মিষ্টি কথা বলে ভেতরে গেম খেলছেন।নিশ্চই তার উপরে তার নির্দেশেই হামলা হচ্ছে পুলিশ ও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

বিজেপি রাজ্য নেত্রী এবং নৈহাটির পরাজিত বিজেপি প্রার্থী ফাল্গুনী পাত্র দাবি করেন যে শুধু অনিন্দিতা সরকার বা রামজয় নয় তার মতন আরও 100 বিজেপি কর্মী নেতারা ঘরে ফিরতে পারছেন না তৃণমূলী গুন্ডাদের ভয়ে।তিনি জানান যে বিজেপি কর্মীদের বিভিন্য মিডিয়ার সামনে এনে তাদের দিয়ে স্বীকার করানো হচ্ছে যে “আর বিজেপি করবো না ভুল করেছি বিজেপি করে। ক্ষমা চাইতে হচ্ছে বিজেপি করার জন্য “। ফাল্গুনী দেবী আরো জানান বিধায়ক পার্থও ভৌমিক নির্বাচনের আগের থেকে হুমকি দিয়েছিলেন তা আমরা বুঝতে পারি নি। তার স্বঘোষিত কথা অনুযায়ী এখন বিজেপি কর্মী নেতাদের ঘরের সামনে পাহারাদার বসিয়েছেন যাতে তারা বাড়ি ফিরতে না পারে। কেউ-কেউ সাহস করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করলে বা বাড়ি ঢোকার চেষ্টা করলে আক্রমণ চালাচ্ছে তারা, হামলা চলছে,চলছে মারধর হুমকি ও বোমাবাজি । ফাল্গুনী দেবী আরো জানান পুলিশ কমিশনার কে সমস্ত ঘরছাড়াদের তালিকা দেওয়া হয়েছে কিন্তু পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বলেন পুলিশ কমিশনার এখান দলদাস পরিণত হয়েছেন।

এখানেই শেষ নেই বেছে বেছে চলছে আক্রমণ। তৃণমূলের এক যুব নেতা বলেন বিধায়ক ঘর পাহারা দেয়ার কথা বলেছিলেন। যারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগুন ঝড়িয়েছে ও এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের পাহারা দিতে তিনি বলেন নি। তাই। …. ক্রমশঃ চলবে। …