ভারতবর্ষের প্রতিদিনের নতুন নতুন ঘটনা প্রত্যক্ষ করছে বাবা ও মেয়ে।তারা নেতা ও মনীষীর খোঁজে নেমে পড়েছে। শুনুন পিতা-পুত্রীর কথোপকথন

নেতা ও মনীষী
তমাল সাহা

শিক্ষার নেই কোনো শেষ।
আবার নতুন করে শুরু করি পাঠ,
দেখি কোথায় সেই প্রান্তিক জ্ঞানরেখা
এখনও পারিনি পেরোতে চৌকাঠ।

মনীষী শব্দটি মাথায় ঘোরে,
মানুষ মনীষী হয় কি করে?
মনস্ এর সঙ্গে ঈষা মনীষা—
এটা কি করে পাওয়া যায়?
ভাবি, খুঁজি,ব্যর্থ হই নিরুপায়।

মেয়ের বইয়ের তাক থেকে তুলে আনি বইটি,নাম-আদর্শ রচনা।
তাতে খুঁজে পাই—
বিদ্যাসাগর, রামমোহন, বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণের জীবন সাধনা।

মেয়ে বলে, কি খুঁজছো, দেখি! দেখি!
এরা তো মহাপুরুষ!
কবেই মরে ভূত, হয়ে গেছে ছাই।
এই ভূমে আর মনীষী জন্মায় নাকি? জয়গুরু নিতাই!

কোথায় খুঁজে পাবে তুমি ঋষি, মনীষী?
মাটি তো ঊষর এখন, দেশ জুড়ে ভাগ্যগণক, জ্যোতিষী আর জ্যোতিষী।
এটা তো নেতার দেশ,
কেউ ছোট কেউ বড় কম বেশি।

আচ্ছা খুকু!
তবে এবার সূচীপত্র খোল্ দেখি,
খুঁজি রচনাটি– কে তোমার প্রিয় নেতা।
সেতো আমি বলে দিচ্ছি, নেতাজী সূর্য সেন ক্ষুদিরাম জাতির জনক পিতা।
এদেশে আর মনীষী জন্মাবে না, কোনোদিন।
কোথায় সেই উপযোগী জলবায়ু,
শুধু হবে ভন্ড নেতাদের চাষ।
এরা হবে সেই নেতা,
শুধু গুছিয়ে নেবে নিজের আবাস।
কেন? আমাদের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী
এরা তো দেশ চালনা করে,
এরা তো আমাদের ত্রাতা!
যারা এগিয়ে নিয়ে যায় দেশকে
তাদেরই তো বলে নেতা।
মেয়ে বলে,কি যে বলো বাবা!
লোকে দেখে শেখে, ঠেকে শেখে,
তুমি তো কিছুতেই শিখলে না,
তুমি না একটা যা তা!

এদেশে আর কোনোদিনও জন্মাবে না
সেই নেতা বা মনীষী।
আমরা যারা নয়া প্রজন্ম
সেতো কবেই বুঝে গেছি।
ডিজিটাল যুগ—
তোমরা পিছিয়ে অনেক অনেক বেশি।
এখন তো ‘নিজেকে দেখুন’
শোভে চতুর্দিকে বিজ্ঞাপন।
ক্ষমতা দখল করো,
পরে দেখা যাবে কোথায় জনগণ!

সব বৃক্ষই বোধিবৃক্ষ নয়,
গাছ তো অনেক, জড়ানো লতাপাতা।
তুমি শুধু শুধু খুঁজে ফেরো
এই কর্কটক্রান্তির চামড়া পোড়া দেশে
কে মনীষী আর কে নেতা?

আচ্ছা খুকু! এখন কী হবে উপায়?
আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি
মেয়ে আমার দিকে তাকায়।
মেয়ে বলে, ইতিহাসে একে বলে মাৎস্যন্যায়।
ধৈর্য্য ধরো বাবা, শুধু সময়ের অপেক্ষা।
অগ্নিমণ্ত্রে আহুতি—
কারা যেন অরণ‍্যে পর্বতে মালভূমে
নিয়ে চলেছে গোপন প্রস্তুতি।
তুমি দেখো, ঠিক—
নেতা নির্ধারিত করে দেবে
সময় মানুষ পরিবেশ প্রকৃতি।