দেবক বারুদ ঘরঃ বারুদ খেয়ে মরে গেল পাঁচ হাভাতে মানুষ

তমাল সাহা

টুকুন বলে, সকালে উঠেই থানার দিকে মুখ রেখে প্রণাম করলুম। দ্বিতীয় প্রণামটি সারলুম এমএলএ সাহেবের বাড়ির দিকে মুখ করে। তৃতীয় প্রণামটি পাঠিয়ে দিলুম কাউন্সিলর বা তোমরা যে বলো পঞ্চায়েত প্রধান,তার পায়ের কাছে।

আমি বলি কেন? হঠাৎ করে তুই এত প্রশাসনিক ভক্ত হয়ে উঠলি?

টুকুন বলে, পুলিশকে মহাবিশ্ব কোষ বলা যায়। তারা সব জানে। মহাজ্ঞানী আবার অন্যদিকে তারা মহা বিনয়ী। তারা জ্ঞানে গুণে মহান হলেও তারা নীরবতার ধর্ম পালন করে। কারণ তারা সংস্কৃত পড়েছে। তারা জানে বিদ্যা বিনয়ং দদাতি।
বাবা! তুমি অভয় মান্ডির ঝলসানো দেহটি দেখেছো? চারটি দেহই সনাক্ত করা যাচ্ছিল না। এক মহিলার হাতটা কনুই থেকে উড়ে গিয়েছে। সব দেহই তো পোড়া আঙড়া। ওপরে রাংতার গুঁড়োর মতো ঝকঝক করছে। মাঝে মাঝে ঝলসানো দগদগে চামড়া গোলাপি বর্ণের ক্ষতচিহ্ন।

মৃতদেহগুলির নামগুলো শুনবে?
বৃন্দা সাঁপুই, কল্পনা হালদার, রাম বেসরা, মনসুর পেয়াদা– পেটের দানাপানির জন্য এই কারখানায় কাজেএসেছিল। শেষে বারুদের আগুন খেয়ে মরবে তা কি জানতো?

নৈহাটির দেবক। মসজিদ পাড়ায় বাজির কারখানায় এরা কাজ করতো। চাষের জমির মাঝখানে কারখানা। বিস্ফোরণে কারখানা পুরো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণের মাত্রার আন্দাজ করতে পারো? আশেপাশের বাড়িতে ফাটল ধরেছে। বিস্ফোরণ গাছও খায়। বাগান জুড়ে কলাগাছের ও খেঁজুর গাছের মাথা উড়ে গিয়েছে। বারুদ ঘর থেকে বার করে আনা হয়েছে চারটি মৃতদেহ।

বাবা! এখন প্রচুর পুলিশ পাহারায় এসেছে। এসপি, এমএলএ, পঞ্চায়েত প্রধান কতসব ধুরন্ধরেরা হাজির। এনআইএ, ফরেন্সিক, তদন্ত– এই তিনটি শব্দ খুব শোনা যাচ্ছে। কারখানার মালিক নূর হোসেনকে খুঁজছে পুলিশ যেন কোনোকালেই তাকে চেনেনা। কোনোকালেই তাকে দেখেনি। এত দিন যে এখানে বেআইনি বারুদ কারখানা চলছিল পুলিশ জানেই না। অথচ পুলিশের সিআইডি-গোয়েন্দা বিভাগ আছে। তারা কিন্তু আরবান নকশাল- মাওবাদীদের দ্রুত শনাক্ত করে ফেলে।

আমি বলি, পুলিশ, প্রশাসন, বিধায়ক বাবু, পঞ্চায়েত প্রধান মশাই তো সঠিক কাজই করছেন। তারা ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন। মানুষকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ভবিষ্যতের আশা দিচ্ছেন।

টুকুন বলে, এখানে নাকি আরও বাজির বেআইনি কারখানা আছে। হালিসহর গঙ্গার ধারেও আছে। বছরের পর বছর ধরে কারখানাগুলো চলছে। পুলিশকাকু, এসপি মেসো, বিধায়ক জ্যেঠু, পঞ্চায়েত দাদা জানেন না?

আমি বলি, সবাই কি সবকিছু জানে? না জানা সম্ভব?
জানলে তো এই বেআইনি কারখানার বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নিতো।
তুই যে বললি ওরা মহাবিশ্ব কোষ, এটা কি সত্যিই সত্যি?

টুকুন বলে,কোথায় কি হচ্ছে সবই জানে ওরা। চুপ করে থাকে। জ্ঞানের অহং দেখায় না। একেই বলে বিদ্যা বিনয় দান করে। তাই না বাবা!

আমি বলি,তুই তো অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিস। আর মাল পেলে সবাই পয়মাল হয়ে যায়।
দুনিয়া ঘোরে, লাট্টুর মতো পাক খায় আর আমরা লেত্তি ধরে দাঁড়িয়ে থাকি।

টুকুন বলে, তোমাকে বাংলা বর্ণমালার প-বর্গের কথা বলি।
প-এ পেট, ফ- এ ফালতু,ব-এ বারুদ,ভ- এ ভাত,ম-এ মৃত্যু।
পেটের ভাতের জন্য বারুদ খেয়ে ফালতু মানুষগুলোর মৃত্যু হলো।