অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন

দশ বছর পার, কোথায় বিচার?

কত মনীষীর জন্মদিন মৃত্যুদিন পালন করি আমরা! সাধারণ কোনো মেয়ের জন্মদিন মৃত্যুদিনের কথা ছাড়ো আমাদের মনে পড়ে কি তার ধর্ষিতা হবার পর খুন হয়ে যাওয়া দিনটির কথা?
আমাদের স্মৃতি ধূসর হয়ে যায়। সেদিনটি ৭ জুন ২০১৩, আজকের দিনে আপনার কি মনে পড়ছে কামদুনির মেয়েটির কথা? দশ বছর পার হয়ে গেল, কোথায় বিচার?
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বললেই নারী হয়ে যায় মাওবাদী। নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে মন্ত্রী-মন্ত্রীনিরা। ধর্ষণের ঘটনা ছোট্ট ঘটনা হয়ে যায়।
শুনুন কামদুনির মেয়েটির কথা। আজ আবার স্মরণ করিয়ে দিই।

আমার কথা
তমাল সাহা

এই পড়ে রইল
আমার অন্তর্বাস
ভেড়ির জলে ভেসে থাক তুই
এই পড়ে রইল আমার অসহায় ভাঙচুর যোনি-স্তন,
খোবলানো মুখ আর ধ্বস্ত নগ্ন শরীর।

এমন সৌন্দর্য বড়ই দুর্লভ!
এই বেলা দেখে নে দুচোখ ভরে, দেখে নে।
কামদুনি মোড়।
এই পাড়ার মেয়ে আমি
পড়ি ডিরোজিও কলেজে।

হায় ডিরোজিও! বড় হয়ে ডিরোজিও হবো, বলেছিলাম বাবাকে।
শুক্রবার এই ভর দুপুরবেলা
একটি মেয়ের সবকিছু রেখে গেলাম।
এবার তোরা আরও ছিঁড়েখুঁড়ে খা।

ইটের গাঁথুনি ঘেরা টালির চাল
তবু কেন স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল!
বাবা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে,
মা বিক্রি করে ছাতু-মুড়ি।
কী হবে এখন আমার মা ও বাবার?
গরীবের মেয়ের দিদিমণি হওয়া
সত্যিই কি জরুরি?

কোনদিন লিখেছিলাম খাতার পাতায়, “…রইল আমার কথা, লোকে বলে আমি খুব ভালো মেয়ে”
এই রেখে গেলাম আমার ফাঁকা কথা—
ছেঁড়াখোঁড়া লাশ! নগ্ন দেহ!
তোমরা দেখো চেয়ে চেয়ে
ওই তো ডিরোজিও সামনে দাঁড়িয়ে।

আমার দু-পা দুদিক থেকে টেনে চেরা
রক্তের দাগ, কেরোসিন, জেরিকেন
তিনি কি দেখতে পেলেন?
এই টিপটিপ বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ
ব্যাগ, কাগজপত্র, ক্লিপবোর্ড, বই
আমাকে মনে রাখবি কি তুই?

খাতার উপরে লিখে রেখেছি নাম
তারও উপরে লিখেছি– ভগবান সহায়!
তখন কি জানতাম ধরলে লোচ্চা মস্তান,
ভগবান ভেড়ুয়া, চোখ বুজে ঘুমায়!