ট্রেন ও অন্যান্য
তমাল সাহা
১)
দুর্ঘটনার ধর্ম নেই, ট্রেনেরও ধর্ম নেই।
অন্ধকার নেমে এসেছে তখন—
নেই কোনও জয়ধ্বনি ও উল্লাস।
পড়ে আছে পাশাপাশি শ্রীরামচন্দ্র ও আল্লাহু আকবরের লাশ!
কে শনাক্ত করবে এই বিকৃত দেহ?
নিজের আত্মীয়ের চিনতেই পড়ছে দীর্ঘশ্বাস!
২)
ট্রেনও নিহত হয়।
দেখি কামরাগুলি সব পড়ে আছে লাইনের ধারে। কত বগি দলাপাকানো চুরমার একাকার।
কপ্টারে নেমেছে মন্ত্রীরা, অকুস্থল ঘুরে গেছে, সান্ত্রীরা ঘিরে রেখেছে তাহাদের।
দেশ চালকেরাই প্রশ্ন তুলেছে দোষ কার?
ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে গেছে,
আমরা আছি তোদের পাশে।
মৃতদেহগুলি হাসে—
রাজকোষের অর্থ যেন তাহাদের পিতামহ-পিতার!
আমাদের অর্থ আমাদেরই দান করে
তৈরি করে আসন্ন ভোটের বাজার।
৩)
দূরপাল্লার ট্রেন—
বগি কোচ কপার্টমেন্ট কামরা শব্দগুলি এইসব দূরগামীএক্সপ্রেসের সঙ্গে জড়িত।
আমি ঠিক এই শব্দগুলির কথা বলছি না।
প্লাটফর্মে গাড়ি এসে থামল।
আমরা তো বাবু, ফার্স্ট ক্লাস এসি কোচের দিকে এগিয়ে যাই।
এগোনোর সময় দেখি কিন্তু ভ্রুক্ষেপ করিনা।
এক নজরে দেখে যাই, একটা নির্দিষ্ট জায়গায় একগাদা লোক অদ্ভুত সব পোশাক পরা পোটলা বাক্স পেটরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এরাও এক্সপ্রেসে চড়বে!
এটা জেনারেল সেকেন্ড ক্লাসের কামরা। অসংরক্ষিত কামরা। টিকিট কেটে উঠে পড়ো। গাদাগাদি করে বসো।
সাধারণ কামরা। বাবুদের মতো আসন নির্দিষ্ট থাকবে কেন?
জেনারেল ক্লাস বললেই হয়! তার সঙ্গে আবার সেকেন্ড শব্দটি যুক্ত কেন?
তাহলে থার্ড ফোর্থ ফিফথও আছে নাকি!
এরাই দাঙ্গায় মরে, এরাই ট্রেন দুর্ঘটনায় মরে।
এরা আসলে ভবঘুরে মজুর।
সোহাগ করে বলা হয় পরিযায়ী শ্রমিক।
এরা কেউ রাজমিস্ত্রি জোগাড়ে ছুতোর রংমিস্ত্রি। কেউ হোটেলে কাজ করে।
ট্রেনে উঠলে এদের নামধাম কেউ জানে না।
এদের পরিচয় এরা কামগার। এরা কাজের খোঁজে যাচ্ছে। নিজের দেশে কাজ নেই।
কামরায় কর্ণিক বাঁসুলি ওলন করাত ছেনি বাটালি হাতুড়ি– এসব পাওয়া গেছে।
পাওয়া গেছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া রুটি তরকারি জলের বোতল
আর পাওয়া গেছে রক্ত মাংসপিণ্ড বিকৃত দেহ।
করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় এরা কতজন মারা গেছে কেউ জানে না।
তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে এরা আর কাজ চাইবে না!