অবতক খবর,২৮ জুলাই: বঙ্গ রাজনীতিতে তৃণমূল দলে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ ঘটতে চলেছে কি? দলীয় ক্ষেত্রে এখন অনেকটাই দেখা যাচ্ছে যে,পিতা-পুত্র অর্থাৎ মুকুল রায় ও শুভ্রাংশু রায় যারা কিছুদিন আগেও বিজেপি দলের সঙ্গে ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিলেন এবং তারা যে সমস্ত বক্তব্য রেখেছেন, পুরোপুরি তৃণমূল বিরুদ্ধ, তারা দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।

মুকুল রায় মমতা ব্যানার্জীকে স্বৈরাচারী,অশিক্ষিত, রাজনীতি সম্পর্কে কোন ধ্যান ধারণা নেই এবং তিনি বলেছিলেন সিঙ্গুর আন্দোলন পর্যন্ত ভুল হয়েছে, তিনি জনগণের সামনে তার জন্য ক্ষমা চাইছেন এমন কথাও বলেছিলেন। শুভ্রাংশু রায়ও মমতা ব্যানার্জী অর্থাৎ অত বড় নেত্রীর বিরুদ্ধে পর্যন্ত মুখ খুলেছিলেন। পাল্টা তাদের বড় গদ্দার, ছোট গদ্দার বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছিল। তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে তৃণমূল দলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জী, তিনি তো রীতিমতো বিষোদগার করেছেন মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও কিভাবে এই সম্পর্ক গড়ে উঠলো?এটা তৃণমূল দলের উচ্চস্তরের অন্যান্য নেতৃত্বরাও বুঝতে পারছেন না। যেহেতু দলটি একক দল মমতা ব্যানার্জী লাইটপোস্ট, এইরকম প্রবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলত মমতা ব্যানার্জীর থেকে বয়সে বড় নেতারাও তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছেন না। অনেকে মনে করছেন যে তারা শিক্ষিত বা রাজনৈতিক সচেতন হলেও আসলে তাদের পেছনের হাড় অর্থাৎ মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছে।

তৃণমূল দলে এখন প্রশ্ন, রাজনৈতিকভাবে কাঁচরাপাড়ার যে গুরুত্ব এখনো তৃণমূল দলে রয়েছে তাই প্রমাণ হতে চলেছে। দিল্লিতে এত উচ্চ স্তরের নেতা থাকতেও কেন মুকুল রায় এবং শুভ্রাংশু রায়কে নেওয়া হলো এই নিয়ে তৃণমূল দলের মধ্যেও আলোচনা চলছে। অর্থাৎ তৃণমূল দলে যে তারা প্রাধান্য পাচ্ছেন এটা বোঝা যাচ্ছে।

বিশেষ করে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন যে, এই অবস্থা ত্বরান্বিত করেছেন মুকুল রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের এই মৃত্যুর ঘটনা। তিনি অসুস্থ থাকাকালীনই এই যোগাযোগটি গড়ে ওঠে অর্থাৎ এই যোগাযোগের সঙ্গে কৃষ্ণা দেবীকে কেন্দ্র করেই তাদের মধ্যে আবার প্রীতির বন্ধন গড়ে উঠেছে। যে মুকুল রায় অভিষেককে বাচ্চা ছেলে বলে অভিহিত করেছেন, রাজনৈতিক পরিপক্কতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন, তাঁকেই জড়িয়ে ধরে, তাঁর থেকেই উত্তরীয় নিয়ে দলে যোগদান করেছেন। অর্থাৎ রাজনীতিতে যে কখন কি ঘটবে এর কোন মূল্যবোধ আছে কিনা, রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র কি, স্বাধীনতার সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের যে চরিত্র দেখা গিয়েছিল, তাদের মধ্যে যে মূল্যবোধ দেখা গিয়েছিল, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেসব তো ধুয়ে মুছে গেছে।

আসলে এখন আর কোন রাজনীতিই হয় না, হয় কেবলমাত্র স্বার্থনীতি, দলবাজি নীতি, কি করে ক্ষমতায় থাকা যায় সেই সমস্ত বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটে যাচ্ছে, এই করোনা মহামারি নিয়ে, ভ্যাকসিনের নিয়ে এবং এর মধ্যেও ত্রাণ চুরি যে অভিযোগ উঠছে সেই সব কোন দিকে রাজনৈতিক নেতাদের নজর নেই। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হতে চলেছে, সেই দিকে কোন লক্ষ্য নেই অথচ রাজনীতির ক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষমতা রাখার জন্য যে কার্যকলাপ চলছে তাতে মানুষ খুবই আশাহত।