মধ্যবিত্ত পণ্য এবং রবীন্দ্রনাথ
তমাল সাহা

যে যাই বলুক রবীন্দ্রনাথ! রবীন্দ্রনাথ! এটা আমাদের মধ্যবিত্তীয় ব্যাপার ও বিষয়। আজ একটু রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তায়ন,রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন আমাদের একটা মধ্যবিত্তীয় অসুখ এবং নিজেকে রবীন্দ্রপ্রেমী বলে প্রচার দেবার অনুপম প্রচেষ্টা। তথাকথিত উচ্চবিত্তরাও রবীন্দ্রনাথে নেই। তারা জনতোলা তুলতেই ব্যস্ত। আর্টকে তারা ইন্ডাস্ট্রি বানাতে জানে।

ফুটপাতে চাতালে বস্তিতে বাস করে যারা তারা ১৬২ বছরেও জানেনা রবীন্দ্রনাথ খায় না মাথায় দেয়। নোবেল-টোবেলের কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে। এটা কী বস্তু, কেন পায় তারা বোঝেই না। রবীন্দ্রসঙ্গীতের জনপ্রিয়তা অনুধাবনের ক্ষমতা মুষ্টিমেয় মধ্যবিত্ত শিক্ষিতজনের আছে‌ আর এই পিছড়েবর্গের, এই সামাজিকভাবে অশিক্ষিত মানুষজন তাদের ভালো লাগে ঢিংকু চিকি গান– ডিজে সঙ্গীত। তারা তাতে প্রাণ পায় কোমর দোলায়। অপসংস্কৃতি হলেও তা জনসংস্কৃতি হয়ে গিয়েছে। আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের উপযোগিতা ইতিমধ্যেই আমাদের প্রকাশ্যে এসে গিয়েছেঋ ট্রাফিক সিগনালে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রবীন্দ্রসঙ্গীতের যে কি ভূমিকা আছে তা নিশ্চিত জেনে গেছি।
আমার হৃদয়ে জীবনে এখন পরিবহনে রবীন্দ্রনাথ!

রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধ ছোটগল্প কবিতা এই যে বিশাল আয়োজন তারা কিছুই বোঝেনা। তারা রক্তকরবী চার অধ্যায় গোরা এসব নাটক ফাটক ঘরে বাইরে সিনেমা টিনেমা দেখতে গেছে এমন কি কোনো বোদ্ধা দর্শক বলতে পারবেন?

সরকারও রবীন্দ্রনাথের নামে বিজ্ঞাপন দেয়, রবীন্দ্রভক্ত বলে যাতে পরিচিতি পায়। তবে সেটা পরের ধনে পোদ্দারি। এই টাকা সরকারের পৈতৃক টাকা নয়, জন-কোষাগার থেকে আসে।সংবাদপত্র রবীন্দ্রনাথের এই বিজ্ঞাপন দিয়ে মুনাফা লোটে, লক্ষ লক্ষ টাকা।

রবীন্দ্রনাথকে পণ্য করে হাজার হাজার বই লেখা হয়। রবীন্দ্রনাথকে বিষয় করে করে কম্মে বেশ খাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লেখা বাজারে খুব খায়। রবীন্দ্রনাথ অর্থ উপার্জনের একটি অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে।

আমার মাথা নত করে দাও হে প্রভু তোমার চরণ ধূলার তলে–মাথা আর কত নত হবে?
এই প্রভু কে? শোষিত লাঞ্ছিত মানবতা জানেনা। তারা জানে রাষ্ট্র ও শাসকই তাদের প্রভু। তারা তাদের চরণ ধুলা তো কবে থেকেই মেখে আছে, রবীন্দ্রনাথ বলার আগেই তারা মাথা নত করেই আছে।