অবতক খবর ,  সংবাদদাতা , বর্ধমান :- দিন পাঁচেক ধরে গ্রামের ঠাকুরতলায় ধর্ণা দিয়েছিলেন অসুস্থ বধূ। খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেন। ধারনা হয় তাকে ডাইনিতে ক্ষতি করেছে। এদিন রবিবার দুপুরে হঠাৎ ওই আদিবাসী বধূ গ্রামবাসীদের সামনে নিদান দিলেন পাড়ারই এক বধূ ডাইনি। তাকে গ্রাম থেকে না তাড়ালে ঘোর অমঙ্গল হবে। ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে তাড়ানোর দাবিতে দিনভর উত্তেজনা ছড়ালো পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের দিগনগর কেওতলা আদিবাসীপাড়ায়। পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে গ্রামবাসীরা ঘিরে ধরে পুলিশের গাড়ি। টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তেজনা চলে। গত মঙ্গলবার পাড়ায় ছিল মনসা পুজো। একাংশ জানান ওদিন বুধিন বাস্কি নামে এক বধূ খড়িনদীতে স্নান করে আসার পর থেকেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। তিনি খাওয়াদাওয়া একপ্রকার ছেড়ে দেন। পাড়ার ঠাকুরতলায় টানা হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন। গ্রামের লোকজনদের অনেকের ধারনা হয় তাকে দেবতা ভর করেছে। আর বুধিন বাস্কি এদিন সবার সামনে ঘোষণা করে পাড়ার এক মহিলা ডাইনি। তার জন্যই অসুস্থতা। ওই ডাইনির কারণে পাড়ায় বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তাকে না তাড়ালে গ্রামের মঙ্গল হবে না।

যাকে ডাইনি বলে আখ্যা দেওয়া হয় তার স্বামী বলেন, “আমি বাজারে গিয়েছিলাম। গ্রামে ফিরে এসে দেখি আমার স্ত্রীকে সবাই ডাইনি বলছে।ওকে গ্রাম থেকে চলে যেতে হবে বলে। আমি বাধ্য হয়ে গ্রামের লোকজনদের কথা মেনে নিই।”
বুধিন নামে ওই মহিলা যাকে ডাইনি ঘোষণা করে , তার বাপেরবাড়ি ভেদিয়ায় ফোন করে গ্রামের লোকজন। তারা মহিলাকে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত ওই মহিলাকে বাপেরবাড়ি থেকে নিতে আসেনি। গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পুলিশ খবর পেয়ে গ্রামে যায়। ওই মহিলাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু গ্রামের লোকজন তাকে পুলিশের হাতে ছাড়তে রাজি হয়নি। উত্তেজিত গ্রামবাসীরা পুলিশের গাড়ি ঘেরাও করে রাখে দীর্ঘক্ষণ। কেঁওতলার কাছে গুসকরা মানকর রোড অবরোধ পর্যন্ত হয়ে যায়। অনেক পরে সন্ধ্যার মুখে গ্রামবাসীরা মহিলাকে পুলিশের হাতে ছাড়তে রাজি হয়। গ্রামবাসীরা জানিয়ে দেন যেহেতু সে ডাইনি তাই ওই মহিলাকে গ্রামে আর থাকতে দেওয়া হবে না।
ডাইনি অপবাদ দেওয়া মহিলাকে উদ্ধারের পর বর্ধমান থেকে র‍্যাফ ও অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ওই গ্রামে যায়। তখন আদিবাসীপাড়ার বাসিন্দারা পুলিশকে লক্ষ্য করে তির ছুড়তে থাকে। পুলিশ পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। তার জেরেই তিন জনকে সোমবার বর্ধমান জেলা আদালতে তোলা হয়