অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদন

চলে গেলেন যুক্তিবাদী আন্দোলনের পুরোধা প্রবীর ঘোষ, ৭ এপ্রিল ২০২৩

লৌকিক নিহত
তমাল সাহা

এই বিশ্বে, এই চলমান ক্রিয়াশীল জগতে অলৌকিক বলে কিছু নেই, সবই লৌকিক।
সেই লৌকিকের প্রবক্তা নিহত হল প্রাকৃতিক কারণে।

সে প্রমাণ করল সময়ও বুড়ো হয় এবং শেষ পর্যন্ত মরে যায়।
কিন্তু তার সময়কালের ঘটমান কর্মকাণ্ডগুলি বেঁচে থাকে।

সম্পর্ক তো ছিলই। সম্পর্কের মানুষগুলি চলে গেলে তুমি যতই যুক্তিবাদী-বস্তুবাদী হও, মন কেমন করবেই এবং তার কথা দৃঢ় এবং ও দীপ্তভাবে মনে পড়বে।

বসন্তের বজ্রনির্ঘোষের সময় সে রাজনীতি করেছিল। ছেড়ে দিয়েছিল কিনা সেটা বড় কথা নয় কিন্তু মাওবাদী চিন্তা চেতনায় প্রভাবিত হয়েই সে আন্দোলনকে অন্য খাতে বয়ে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। অন্য চেতনা অন্য বস্তুবাদী ধারণা নিয়ে দেখা গেল তাকে।

তাবিজ কবজ মালা মাদুলি তাগা আরো কত সব বুজরুকি হাত-দেখা এইসব গোলমেলে মানে অপবিজ্ঞান-অপসংস্কৃতি নিয়ে রীতিমতো একাই সোচ্চার আন্দোলনে নেমে পড়ল সে।

বুক বাজিয়ে বলা যায়, বর্তমান সময়ে এই যে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরোধিতা, এই যে নাস্তিকতা নিয়ে এত কথা,এ বিষয়ে সে অনেক আগেই সচেতন ছিল এবং এ বিষয়ে অন্যতম উল্লেখযোগ্য সক্রিয় প্রবক্তা সোজা বাংলায় মাঠে নেমে লড়াকু কর্মীর ভূমিকা নিয়েছিল।

অস্বীকার করব কেন মধ্য নব্বই দশকে তার উত্থান আমাদের নজর কেড়েছিল। সে তখন একাই একশো।
তার বই অলৌকিক নয় লৌকিক (৫ খণ্ড) তো ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তে কাটতি হয়ে হয়ে গিয়েছে বাজারে। তারপর একের পর এক বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিবাদী বই প্রকাশিত হয়েছে।

সে রীতিমত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ময়দানে নেমেছিল। বেশ কিছু বুজরুককে সে হাতেনাতে ধরেও ফেলেছে।
বুজরুকিবাজ সোজা কথায় লোকঠকানেওয়ালাদের বিরুদ্ধে সে পঞ্চাশ লক্ষ টাকার বাজি ধরেছিল।
অলৌকিক শক্তির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারলেই ৫০ লক্ষ টাকা ইনাম মিলবে তৎনগদ।

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি ছিল সে। সেটা বড় কথা নয়, সে নিশ্চিত একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।

সেটা ছিল ১৯৮৯ সাল। কাঁচরাপাড়া হাই স্কুলের মাঠে এক বিজ্ঞানভিত্তিক প্রদর্শনীর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আয়োজক ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি কাঁচরাপাড়া শাখা এবং বিজ্ঞান দরবার। এই অনুষ্ঠানে অলৌকিক নয় লৌকিক এমন কিছু প্রদর্শনী সে দেখিয়েছিল এবং জ্যোতিষবিরোধী বক্তব্য রেখেছিল।

বিজ্ঞান আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব– সে এই দর্শনের ধারা ভাষ্যকার ছিল।