পুলিশের গুলিতে একটি কিশোরের মৃত্যু ৩০ বছরের কংগ্রেসি অপশাসনের পতনের সূচনা ঘটিয়েছিল।
১৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬, ঘটেছিল এই ঘটনাটি স্বরূপ নগরে, বসিরহাটের রাস্তায়। দেখুন মনে পড়ে কিনা, শুনুন…

কৌটোর কবিতা
তমাল সাহা

কেরোসিনের ডিবে নিয়ে
অনন্য কবিতা লেখা যায়,
যা এখনো কোনো কবি পারেননি
তা হাতে কলমে লিখে দেখিয়েছিল
ছোট্ট নুরুল স্বরূপনগরের রাস্তায়।

মিছিলই তো জীবনের অন্য নাম,
জীবনের অন্য নামই তো মিছিল,
বুঝেছিল নুরুল।
তখন তার বয়সই বা কত?
নুরুল বলেছিল,
আমি তোদের সঙ্গে মিছিলে যাবো,
মিছিল কাকে বলে দেখবো।
নুরুলেরা মিছিলে যায়,
নুরুল মিছিলে গিয়েছিল।

এত্তো মানুষ!এত্তো বড় লাইন!
কতরকম মানুষের মুখ,
কারো পায়ে চটি আছে,কারো নেই,
কত জনের গায়ে ছেঁড়াফাটা,
তাপ্পিমারা জামা,পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি
কারো হাতে প্ল্যাকার্ড
অনেকের হাতেই লাল পতাকা—
বিস্মিত হচ্ছিল তার চোখ।
তার শুধু পর পর প্রশ্ন—
হাতে ধরে আছে বড় পিচ বোডটা—
ওটা কি, ওটাতে কি লেখা আছে?
আমার হাতে একটা পতাকা দাও না?
ওটা এত্তো লাল কেন!

লাল কেন? লাল কেন?
শিশু উচ্চারণ প্রকট হয়ে উঠেছিল
ম্রিয়মাণ শীতের হাওয়ায়।
ক্ষোভে ফুঁসছিল তার বুক।
তার ছোট্ট হাতে ধরা ছিল
ছোট্ট একটা কেরোসিনের ডিবে।
নুরুলের উচ্চারণ তখনও স্পষ্ট নয়।
কেরোসিন শব্দটি তখনও তার মুখে
কেরোছিন উচ্চারিত হয়।

ওরা বলেছিল পড়তে গেলে আলো চাই।
আলো চাইলে কেরোসিন চাই।
নুরুলও মেলাচ্ছিল গলা—
কেরোছিন চাই,কেরোছিন চাই।
মাঝে মাঝে ডিবেটা উঁচু করে ধরছিল।
মিছিলে এত্তো মানুষ!এত্তো বড় মিছিল!
সে মিছিলে আমি!
নুরুল ভাবছিল আর
স্লোগানে গলা মেলাচ্ছিল।
কন্ঠই সব, জীবনের কলরব।
কন্ঠই ধ্বনি,কন্ঠই প্রতিবাদ।
সোচ্চার কন্ঠকে কে করবে বরবাদ?

গুলিটা কন্ঠস্তব্ধ করেই বেরিয়ে গেল
গলা ফুঁড়ে।
নুরুল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে—
হাতের ডিবেটা ছিটকে চলে গেল একটু দূরে।
ডিবে আর কতদূর যায়,
কতদূর যেতে পারে?
গড়াতে গড়াতে থমকে রইলো পড়ে
নয়ানজুলির ধারে।

যদিও ভাতের অভাব ছিল,
নুরুল চায়নিকো ভাত।
চেয়েছিল শুধু বই পড়ার আলো।
রাষ্ট্র তাকে গুলি দিয়ে স্যালুট জানালো।
নুরুল, ছোট্ট নুরুল,আস্ত দুটো গুলি খেলো।

নুরুলই হলো ইতিহাস,প্রথম শহিদ—
খাদ্য চাই!আলো চাই!
আন্দোলনের মশাল জ্বালালো।

নুরুল! নুরুল! কোথায় নুরুল?
তার ডাকে বাতাস আজও আকুল।