অবতক খবর,১১মে: কাঁচরাপাড়া ১৪ নং ওয়ার্ডে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি। কারণ এখানে বিনা নোটিশে কারোর দোকান ভাঙা হচ্ছে, তো কারোর দোকান ভাঙা হবে বলা হচ্ছে। এই ১৪ নং ওয়ার্ড অর্থাৎ আব্দুল জব্বার রোডে প্রায় ৪০ বছর পর ড্রেন পরিস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীরা একদিকে এ নিয়ে যেমন খুশি,তেমনই বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙ্গা পড়ায় অত্যন্ত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

 

যাদের দোকান ভাঙ্গা হচ্ছে তাদের অভিযোগ, কোনরকম নোটিশ না দিয়ে, তাদেরকে না জানিয়েই দোকান ভাঙ্গা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তারা এও বলছেন যে, বদলা নেওয়ার জন্যই নাকি দোকান ভাঙ্গা হচ্ছে।

 

ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঙ্গীতা সাউ, কাঁচরাপাড়া পৌরসভার কর্মী প্রকাশ বাবু, সিআইসি দিলীপ ঘোষ এ বিষয়ে জানাচ্ছেন যে, জেসিবি দিয়ে পরিষ্কারের কাজ চলছে। ফলত, কাজের সুবিধার্থে কিছু দোকান ভাঙা পড়ছে।

 

তবে যাদের দোকান ভাঙ্গা পড়ছে তাদের অভিযোগ, আমাদের দোকান ভাঙ্গা হলে কাজের সুবিধার্থে সকলের দোকান ভাঙ্গা হচ্ছে না কেন? দোকান ড্রেনের উপরে নয়, রয়েছে ড্রেনের পাশে। সেখানে একের পরে এক পাকা দোকান গড়ে উঠেছে। কিন্তু দোকান গুলি গড়ে ওঠার সময় কেউ কোনো কথা বলল না। আর এখন এই অজুহাত দিয়ে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান তারা ভাঙতে এসেছে।

 

একদিকে কাউন্সিলর সঙ্গীতা সাউয়ের স্বামী সীতেশ জয়সওয়াল তিনি জানাচ্ছেন,এই ড্রেন দীর্ঘদিন নোংরা অবস্থায় থাকায় বৃষ্টির সময় জল জমে মানুষের বাড়িতে ঢুকে যায়। আর এই অভিযোগ জানানো হয়েছিল কাঁচরাপাড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান কমল অধিকারীকে। চেয়ারম্যান এ বিষয়ে তৎপর হয়ে ড্রেন পরিষ্কারের জন্য জেসিবি মেশিন পাঠিয়েছেন। ফলত এত বড় মেশিনের কাজের পথে যদি দোকান পড়ে,তবে তা ভাঙতেই হবে।

 

কিন্তু অন্যদিকে ওই দোকান মালিকদের অভিযোগ, যারা দোকান ভাঙতে আসছেন অর্থাৎ কাউন্সিলর এবং তাঁর স্বামী, তাদের ক্লাবই তো ড্রেনের পাশে রয়েছে। শুধু তাই নয়, পাকাপোক্ত দোতলা ক্লাব। এখন তারা প্রশ্ন তুলেছেন, এই পিডব্লিউডি’র জায়গায় কিভাবে এই দোতালা ক্লাব তৈরি হলো? ভাঙা শুরু হলে ওই ক্লাব থেকেই শুরু হোক। তারপর সব পর পর ভাঙ্গা পড়ুক। তাহলে কেউ আর কোন অভিযোগ করতে পারবে না। কিন্তু ক্লাব থেকে যাবে, তাদের আত্মীয়দের দোকান থেকে যাবে, আর আমরা সাধারণ মানুষ, যারা কোন কিছুর সাথেপাছে থাকি না, তাদের দোকানগুলোই ভাঙ্গা পড়বে? আমরা সাধারণ তৃণমূল কর্মী। পাঁচিলে বসে থাকা কর্মীদের বিরোধিতা করেছিলাম, তারা টিকিট পেয়েছেন বলে বিরোধিতা করেছিলাম, সেই কারণেই কি আমাদের এই হাল? বদলা নেওয়ার জন্যই কি আমাদের দোকান ভাঙা পড়ছে?

 

ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সঙ্গীতা সাউ জানান, আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি। মানুষের কোন ক্ষতি আমরা করতে চাইনা। কিন্তু একটা দুটো দোকান নয়, বেশ কয়েকটি দোকান এই ড্রেনের কাজের জন্য ভাঙা পড়ছে।

 

এ প্রসঙ্গে কাঁচরাপাড়া পৌরসভার সিআইসি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে যখন আমরা কথা বলি,তখন তিনি জানান যে, যা বলার চেয়ারম্যান বলবেন। কারণ চেয়ারম্যানের নির্দেশেই কাজ হচ্ছে।

 

এই ওয়ার্ডের একটি তৃণমূল ক্লাব একতা সংঘ,তাদেরও অভিযোগ যে, সীতেশ জয়সওয়াল এবং দিলীপ ঘোষ তাঁরাই জেসিবি মেশিন দিয়ে দোকানগুলি ভেঙে দিয়েছে। ‌কি কারণে ভাঙ্গা হয়েছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। তবে বিষয়টি আমরা চেয়ারম্যানকে জানাবো।

 

অদ্ভুত এক পরিস্থিতি চলছে বীজপুরে। আগাছার মত বেআইনিভাবে এদিকে ওদিকে দোকান গজিয়ে উঠছে। আবার বেআইনিভাবে সেগুলি ভেঙেও ফেলা হচ্ছে।

 

এখন মানুষ প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন যে, এই সব কি হচ্ছে? এগুলো তাদের চোখে বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা বলছেন,যখন বেআইনিভাবে দোকান গড়ে উঠছিল, তখনই দোকান গুলিকে ভেঙে ফেলা উচিত ছিল। আর এখন যখন এতদিন পর সেখানে ওই দোকানদাররা ব্যবসা করে রুটি রুজি যোগাচ্ছেন, তখন হঠাৎ করেই দোকান গুলি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।

 

কিছুদিন আগেই দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন,আম্বেদকর বাজার সংলগ্ন অঞ্চলে ড্রেনের উপর যে দোকান,সেই দোকানদারকে বলেছিলেন ৭ দিনের মধ্যে দোকান সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু এখনো সেই দোকান বহাল তবিয়তে রয়েছে। কই সেই বেলা তো দীলিপবাবু তাঁর ক্ষমতা প্রদর্শন করেন নি!! আর এইখানে ড্রেনের পাশে দোকান রয়েছে, তাহলে ক্ষমতাবলে সেগুলি কেন মেশিন দিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মানুষ প্রশ্ন করছেন, বীজপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে? এখানে কি মানুষের ক্ষতি করে রাজনীতি হবে? নাকি মানুষকে বোকা বানানোর রাজনীতি হবে? সেইদিকেই তাকিয়ে সাধারণ মানুষ।