মাত্র একুশ বছরের প্রাণ। প্রীতিলতা। বিপ্লবী নারী। আজ তার জন্মদিন।

প্রীতিলতা
তমাল সাহা

টুকুন বলে, বাবা! আজ
কার্ল মার্ক্সের জন্মদিন।
তা তো জানো,
তিনি তো বিশ্বজনীন।

এই ছোট্ট মেয়েটিকে একটু মানো,
সেও তো ছিল না কম আলোড়নবিহীন।
এইটুকু তো তার জীবন, মাত্র একুশ
কিন্তু মৃত্যু তার কাছে মেনেছিল হার।
এই বয়সেই নিয়েছিল ছদ্মনাম ফুলতার।

বাবা বলে, খুলে বল না টুকুন!
অত কেন ঢাক ঢাক গুড় গুড়?
টুকুন বলে, মেয়েটি ছিল মুক্তিযোদ্ধা
কন্ঠে ছিল বিপ্লবী সুর।

আরে! মেয়েটি তো প্রীতি! প্রীতিলতা!
এত কথা খুলে বলা যায় নাকি?
সে তো বিদ্যুত-লতা!

বাবা বলে, শোন! ওর ডাক নাম ছিল রাণী।
মেয়েটি তো মেয়ে নয়, অন্য ধাঁচের প্রাণী।
মাস্টারদা সূর্য সেনের হাতে গড়া
সশস্ত্র বিপ্লবের দিকে অভিমুখ তার
পরাধীনতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কড়া নাড়া।

বাবা জানো! পাহাড়তলিতে ছিল ইউরোপিয়ান ক্লাব–
ব্যাপক ফুর্তির আয়োজন।
তার সদর দরজায় লেখা ছিল
‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ বারণ’।

প্রীতির নেতৃত্বে মাত্র পনেরোজন সেই ক্লাব করেছিল আক্রমণ

লোকে বলে, প্রীতিকে নাকি
গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
আমি জানি, সে পড়েনি কো ধরা।
মৃত্যুকে যে হাতের তেলোর মতো চেনে
জীবন তাকে দেয় নিয়মিত প্রহরা।

ওষুধের বড়ির মতো সে
মুখে পুরে দেয় পটাসিয়াম সায়ানাইড।
অগ্নিকন্যা সেই মেয়ে বিপ্লবী ডিনামাইট!

বলতে বলতে কেঁদে ফেলে টুকুন।
বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠ তার হয়ে আসে ভারী–
বাবা! শোনো! শোনো!
প্রীতিলতাই ভারতের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহিদ নারী।

শেষ চিঠিতে প্রীতিলতা মাকে কী লিখেছিলো, জানো বাবা, শোনো!
তুমি শুধু শুধু কেন কাঁদো মা!
দেশমাতাও মা।
তার জন্য উৎসর্গ করো আমাকে।
আমায় কোরো ক্ষমা।

কাঁচরাপাড়ায় কত ক্লাব আছে–
তার নামে নেই কোনো ক্লাব!
বাবা! আমি বলি,
প্রীতিলতা!ইনকিলাব জিন্দাবাদ!