অবতক খবর,১৬ মার্চ: এই ভাবেই মানুষ একটা বিপর্যয় থেকে আরেকটা বিপর্যয়ের দিকে যায়। ‌ প্রকৃতির কাজ প্রকৃতি করে যায়। সূর্য ওঠে রৌদ্র ছড়ায়, চাঁদ ওঠে জ্যোৎস্নার আলো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ‌ আলোর স্বভাবই ছড়িয়ে পড়া। সে ক্ষেত্র মানে না, সে মিনার, মসজিদ, মন্দিরের মাথায় ঝিলিক দিয়ে ওঠে। ‌সে বীজক্ষেতে,সমাধিস্থলে, গোরস্থানে, শ্মশানভূমিতেও ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা বিধ্বস্ত ভস্মরাশির উপর এবং ত্রাণশিবিরে ছাউনির মাথায়।

দিল্লিতে কোতল কাণ্ডের পর এলো করোনা। কোতল মন্দির- মসজিদ মানে, ধর্ম মানে, হিন্দু-মুসলমান মানে।করোনা এইসব কিছুই মানে না। সে ধর্মকে তোয়াক্কা করেনা, ধনী-গরীব মানে না, মস্তান দাঙ্গাবাজ, ভালো মানুষের তফাৎ মানে না। করোনা! করোনা! করোনা!

আসলে ভয়। দাঙ্গা ও করোনা দুটোই ভয়ের। কে বেশি ভয়ঙ্কর? প্রশ্ন উঠেছে। করোনার প্রেসক্রিপশন আছে,দাঙ্গার প্রেসক্রিপশন কি? করোনা জন্য মাস্ক আছে, সাবান আছে, অ্যালকোহলিক স্যানিটাইজার আছে,আর আছে সরকারি প্রচার, ভ্যাকসিন আছে। করোনা তো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আর দাঙ্গার কারণ বলতে গেলেই মাথা নিচু হয়। দাঙ্গা লাগানোর ব্যবস্থাপত্র আছে–
পাথর, তরবারি,মাচিস, পেট্রোল, পেট্রোল বোমা,আগুন কত কি। আরো আছে উস্কানিদাতা। অথচ তার নিরাময়ের কোন ব্যবস্থাপত্র নেই। আছে শেষ পর্যন্ত গোরস্থান,শশ্মানভূমি, ময়নাতদন্তের আগার। খুব ভালো হলে ত্রাণশিবির, গোদা বাংলায় লঙ্গরখানা। সেখানে নিঃস্ব অসহায় হয়ে মাথা নিচু করে খালি ঝোলা খিচুড়ি খেয়ে যাও। ভারতীয় নাগরিক হয়ে যেন পৃথিবীর জঘন্যতম অপরাধটি করে ফেলেছো।

বাহ্যিক প্রতিষেধকে করোনা হটানো যায়। সরকার সাবান দেয়, অ্যালকোহলিক স্যানিটাইজার দেয়। কিন্তু দাঙ্গা চিরকালীন মননের হিংসা, ঈর্ষা আর মহা মূল্যবান ভোট যতদিন থাকবে দাঙ্গা থাকবেই।
করোনার পাশে হাসপাতাল থাকে, ডাক্তার থাকে, সরকারি কত কৌশল কায়দা-কানুন থাকে। ‘আমরা জনগণের পাশে আছি’ বলে কত হাঁকডাক থাকে। স্কুল-কলেজ ছুটি থাকে। কেন্দ্র বলে এক মিটার দূরে থাকো। রাজ্য বলে পাঁচ মিটার দূরে থাকো।

দাঙ্গার সময় রাষ্ট্র নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু উস্কানি থাকে।নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে প্রশাসন। মানুষ লাশ হয়ে যেতে থাকে, হতে থাকে একের পর এক মৃতদেহ এবং পচা শব। পড়ে থাকে রাস্তায় ঝোপেঝাড়ে, ড্রেনে, নর্দমায়। মানুষকে কত নিচু করা যায়,তা জানে শুধু দাঙ্গা।

দিল্লির লঙ্গরখানা মার্কা ত্রাণশিবিরে এখন করোনার সর্তকতা প্রচার চলছে। কিন্তু মহল্লার পর মহল্লা পুড়ে গিয়েছে। গাড়ির দলিল-দস্তাবেজ আধার-ভোটার কার্ড, গাড়ির লাইসেন্স সমস্ত ভস্মরাশিতে পরিণত। শিশুর ভ্যাকসিন কার্ড, পড়ার বই পর্যন্ত পুড়ে ছাই। কি হবে এদের?

করোনার চেয়ে দাঙ্গার ভয়ে এখন ভয়ানক আক্রান্ত এদের শরীর ও মনন।
এই ভয় কি দূর করতে পারবে করোনার মাস্ক-সাবান?