অবতকের বিশেষ প্রতিবেদনঃ

অক্ষয় তৃতীয়ায় পরশুরামকে চাই
তমাল সাহা

অন্ধ তমিস্রা ঘনীভূত এই কালবেলায় খরতপ্ত বৈশাখের চান্দ্র শুক্লা তৃতীয়ার নাক্ষত্রিখ আলোয় কেউ দৃশ্যান্তরে কী কোন সংলাপ রচনা করে যায়? আমার শ্রবণেন্দ্রিয়ে সেই বার্তাময় ধ্বনি বোধ করি প্রবেশ করে।
অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে কার গর্ভে নড়ে ওঠে সেই অস্ত্রপাণি পুরুষ! জরায়ুভেদী রক্তস্রাবের মধ্য দিয়ে উদ্ভূত হয় ব্রাহ্মক্ষত্রিয় পরশুরাম। আমার চোখে দীপ্ত হয়ে ওঠে কোনো ব্রাহ্মণ নয়, জ্ঞানী এক মানুষ, ক্ষত্রিয় নয়, অসম সাহসী এক যোদ্ধা। আমার চেতনায় উপলব্ধ হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম ব্রাহ্মযোদ্ধা।এ কোন বিশাল সোমত্ত বাহুবলী! যাবতীয় পরিচিত অস্ত্রসমূহ পরিত্যাগ করে বিশাল এক লৌকিক কুঠারকে স্কন্ধ করে জেগে ওঠে! পরশুর ইতিহাস লিখবে বলে ভূজাত হয় পরশুরাম।

পরশু-র তাৎপর্য খুঁজে ফিরি‌ পরশু তো আগামী ভবিষ্যৎ। পরশু তো কুঠার, অস্ত্রের প্রতীক। রাম অর্থে নিহিত বিশালত্ব। বুঝে যাই অস্ত্রের মধ্যেই বিপ্লব নিহিত।
রামায়ণ ও মহাভারতের যুগসন্ধিক্ষণে তাইতো পরশুরামের জন্ম। আমি তাকিয়ে থাকি কুঠার স্কন্ধী বিশালত্বের দিকে, আমার প্রিয় পরশুরামের দিকে।

অক্ষয় তৃতীয়ার ঐতিহাসিক ক্ষণ মহাভারতের লিখনের প্রারম্ভিক কাল— একদিকে উপবিষ্ট কলম হাতে সিদ্ধিদাতা গণেশ অন্যদিকে প্রবক্তা মহর্ষি ব্যাসদেব।
এই দিনই সেই মহান ভগীরথের নেতৃত্বে গঙ্গার ভূপৃষ্ঠে অবতরণের দিন। অদ্ভুত এই দিনে আমি শুধু খুঁজে ফিরি পরশুরাম।

মাতৃপ্রিয় হয়েও মাতৃহন্তারক। গন্ধর্বরাজ চিত্ররথের জল বিহার– রমণীদের সঙ্গে রমণ ক্রিয়ার দৃশ্য মুগ্ধতার আবেশ এনেছিল মাতা রেণুকার চক্ষে। রতি সুখে মাতা দর্শন করছিলেন সেই দৃশ্য আর পিতা জমদগ্নিকে বিস্মৃত হয়ে অপূর্ব দর্শন রাজা চিত্ররথকে কামনা করছিলেন। মা নিশ্চিত অন্যের যৌনক্রিয়া দর্শনের অপরাধ করেছিলেন। পিত্রাদেশ অমান্য করে এই রমণীয়দৃশ্য দেখেছিলেন মা। পিত্রাদেশে পরশুরাম সেই শানিত কুঠারের সাহায্যে মায়ের শিরচ্ছেদ করেছিল। কঠিন নিষ্ঠুর হয়েছিল পরশুরাম। পরবর্তীতে কঠোর তপশ্চর্যার মাধ্যমে আবার প্রিয় মাতার পুনর্জন্ম ঘটিয়ে মাতাকে দৃশ্যমান করেছিল। দুচোখ ভরে দেখেছিল মায়ের মুখ।

সে তো তথাকথিত মুনি ব্রাহ্মণের প্রতিনিধি ছিল না। ব্রহ্মাণ্ডের অর্থাৎ এই পার্থিব ও জাগতিকলোকের অন্যায় শোষণের বিরুদ্ধাচারণ করেছিল সে। তাই সে ব্রাহ্মযোদ্ধা। যুগ সন্ধিক্ষণের মানুষ সে। ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের সন্ধিক্ষণের জাতক।পরশুরাম একতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসকের অত্যাচার, নারী লাঞ্ছনা বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সত্তা। ২১ বার পৃথিবীকে নিক্ষত্রিয় করেছিল পরশুরাম।

বিপন্ন মানবতার এই দুঃসময়ে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এই মহাকালে, মাতৃভূমি জন্মভূমি নিলামে বিক্রির এই দুঃসহ কালে জীর্ণ পুরাতনকে ভস্মীভূত করে অক্ষয় তৃতীয়ার আলোকিত হয়ে বেজে উঠুক পাঞ্চজন্য, ধ্বনিময় হয়ে উঠুক মাঙ্গলিক ঘন্টা। সমস্বরে প্রার্থনা উঠুক— পরশুরাম! স্কন্ধে তুলে নাও কুঠার,‌শাসকের
ব্যারিকেড ভাঙো, পরশুরাম!