অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন

সংবিধান প্রণেতা দলিত নেতা ভীমরাও আম্বেদকর বীজপুরে পা রেখেছিলেন একদিন

তমাল সাহা

কাঁচরাপাড়ায় ডঃ আম্বেদকরের পদার্পণ ঘটেছিল ১৯৪৬ সালে ১৪ এপ্রিল। ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকর অবিভক্ত বাংলা থেকে কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মহারাষ্ট্রের অধিবাসী হলেও সেখান থেকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অবিভক্ত বাংলার থেকে প্রার্থী হন এবং নির্বাচিত হন। তাঁকে সংবিধানের রূপকার বলা হয়। সংবিধান প্রণেতা হিসেবে তার এই অগ্রণী ভূমিকার পেছনে বাংলা এবং বাঙালির উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর কাঁচরাপাড়ার নমঃশূদ্র উদ্বোধিনী সমিতির আয়োজনে তাঁকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়েছিল কাঁচরাপাড়া স্পল্ডিং ইনস্টিটিউটে। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে কাঁচরাপাড়াতেই তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছিল এবং ভারতীয় সমাজ জীবনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল কাঁচরাপাড়া মান্ধারী প্রাইমারি স্কুলের স্কুলে হরিজন’ সেবা সমিতির উদ্যোগে। সেই সভায় পৌরোহিত্য করেছিলেন কাঁচরাপাড়ার পৌরসভার চেয়ারম্যান রাসবিহারী শাস্ত্রী। এই আয়োজনে উল্লেখযোগ্য
ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন কাঁচরাপাড়ার সুপরিচিত পিছড়েবর্গের নেতা বিনোদ মল্লিক, এমনই দাবি করলেন এই অঞ্চলের প্রবীণ আইনজীবী ও সমাজকর্মী রামজিত রাম।
কাঁচরাপাড়া আম্বেদকারকে শ্রদ্ধা জানানোর এবং স্মরণ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে। কাঁচরাপাড়া লিচুবাগান অঞ্চলে তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তাঁর নামে পৌরবাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কাঁচরাপাড়া অঞ্চলে তাঁর স্মারক আবক্ষ মূর্তি রয়েছে অশোক মিত্র রোডে। সেই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে হরিজন সমিতির পক্ষ থেকে এবং আরেকটি পূর্ণায়ব মূর্তি রয়েছে রেলকর্মী অধ্যুষিত ভূতবাগান অঞ্চলে।

ভীমরাও দেখলেন
তমাল সাহা

ভীমরাও আম্বেদকর জন্মালেন

জন্মেই হাঁটতে শুরু করলেন
কবে যে গণতন্ত্রের সেই চারটি স্তম্ভ গেঁথে তুলে ছিলেন সেগুলি ধরে নাড়াতে লাগলেন
দেখলেন বড় নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে
বুঝলেন অনেক দিনের পুরনো তো, যথার্থ সংস্কার হয়নি!

ঢুকে পড়লেন পার্লামেন্টের লাইব্রেরি ঘরে
চেনা বইটা চিনতে পারলেন না
অনেক কষ্টে খুঁজে পেলেন
আলমারির তাক থেকে টেনে নামিয়ে দেখতে থাকলেন
দেখলেন বইটা অনেক পাতলা হালকা হয়ে গিয়েছে সংবিধানের অনেক পাতাই
ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে
পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলেন কয়েকজন দাগি আসামি সাংসদ পার্লামেন্টের করিডরে হাঁটতে হাঁটতে তার দিকে চোখ পড়তেই মুখ ঘুরিয়ে নিল

গেলেন দলিত অধ্যুষিত এলাকায়
দেখলেন গণতন্ত্রের স্বরূপ—
ধর্ষণ খুন দাহ অস্পৃশ্যতা সব ঠিক মতই চলছে আর অস্পৃশ্যতা বজায় থাকলেও দলিত নারীদের বিছানায় তুলে নিচ্ছে উচ্চবর্ণের লোকেরা
অস্পৃশ্যতা! শব্দটি উচ্চারণ করে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন
যাপিত জীবনে দলিত নারী অস্পৃশ্য হলেও ভোগে উপভোগে নয়

তবে নিজের ভুল স্বীকার করলেন
তিনি মাইনোরিটি ও মেজরিটি শব্দ দুটি সংবিধানে ব্যবহারের জন্য
শব্দদুটি আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ও এগিয়ে থাকা হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করলেন
জানতে পারলেন ধর্মের নামে দাঙ্গা এখনো টিকে আছে

নিজে আইনজীবী ছিলেন
যেখানে সেই বৈপ্লবিক মর্মর মাস্টারদা সূর্য সেন মাথা তুলে, ক্ষুদিরাম বসু বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই চত্বরে এসে এবার এক ঐতিহাসিক ঘটনার সম্মুখীন হলেন

দেখলেন হাইকোর্টের অন্দরে আইনজীবীদের হাতাহাতি চলছে

ভারতবর্ষের মানচিত্রের দিকে তাকালেন
দেখলেন গণতন্ত্র ও সংবিধান শব্দদুটি নেই
রাষ্ট্রীয় ময়দানে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তেরা দ্রুতগতিতে চলাফেরা করছে