অবতক খবর,৩ মার্চ: পশ্চিমবঙ্গের ঘনায়মান এই সংকটের মুহূর্তে সে যেই দলের রাজনীতিই হোক না কেন, রাজনীতিকে আদর্শ মনে করেন যে প্রতিবন্ধী যুবকটি ২ দিন হুইল চেয়ার চালিয়ে হালিশহর থেকে ব্রিগেড ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছেন,২৭ তারিখ রাত ১০টায়। সে বীজপুর কেন সমগ্ৰ পশ্চিমবঙ্গে সাড়া ফেলে দিয়েছে।

প্রতিবন্ধী যুবকটির নাম রবি দাস। তিনি একজন শ্রমজীবী মানুষ। হুইল চেয়ারে বসে বসে দূরদূরান্ত পরিভ্রমণ করে লটারি বিক্রি করেন,সেই উপার্জিত টাকা তার মার হাতে তুলে দেন।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক তত্ত্ব আমি বুঝিনা । কিন্তু বামপন্থা একটি আদর্শ এটা আমি মনে করি। আমি কোন সাহায্য প্রার্থী বা ভিক্ষা প্রার্থী নই। প্রতিবন্ধীজনিত কোনো সুযোগ-সুবিধা আমি সরকারিভাবে আজও গ্রহণ করিনি। বর্তমান সরকারকে আমি মনে করি দুর্নীতির সরকার,মিথ্যাচারিতার সরকার। তার কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা নেই। আমি ছোটবেলা থেকেই বামপন্থী রাজনীতি, পরিষ্কার করে বলতে চাই সিপিএমের রাজনীতির আদর্শে বিশ্বাসী। ব্রিগেডে যাওয়া আমার একটি নেশা। জ্যোতি বসুর আমলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও আমি এইভাবেই এই হুইলচেয়ার চালিয়ে ব্রিগেড ময়দানের চলে গিয়েছি। বাড়ি থেকে বাধা আমি উপেক্ষা করেছি। কারণ লটারির টিকিট বিক্রি করার নাম করে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। যাতে বাড়ি থেকে কোনো বাধা সৃষ্টি না করতে পারে। সুজাসুজি ব্রিগেড চলে যাই।

তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, এটা ঠিক কথা যে ব্রিগেড যাওয়া তার একটি নেশা। তিনি বলেন, দেরিতে ফিরতে দেখে এবারও আমি রাস্তায় রাস্তায় অনুসন্ধান করি, গঙ্গার ঘাটে গিয়ে অনেকের কাছে জানতে চাই,তারা বলেন হুইলচেয়ার চালিয়ে তাকে নৈহাটির দিকে যেতে দেখেছে। পরবর্তীতে টিভিতে, সংবাদপত্র থেকে জানতে পারি ছেলে আমার তার নিজের পছন্দমত জায়গায় চলে গিয়েছে।

রবি বাবু বলেন, আমি ঘুমাই না। ২৬ ফেব্রুয়ারি ত আমি রওনা দিয়েছি। এই পথ আমার চেনা পথ। সারারাত আমি হুইল চেয়ার চালাই। চালিয়ে চালিয়ে আমি ২৭ তারিখ রাত দশটার সময় গিয়ে ব্রিগেড ময়দানে পৌছাই এবং সেখানে আশ্রয় শিবিরে থাকি। ওখানে অনেক চেনা মুখ দেখতে পাই। তারাও আমায় চেনে। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া করি, আমি সেখানেই থাকি। ওখানে পুরো বক্তৃতা শুনেছি।

তিনি বলেন, ২৮ তারিখ আমি বাড়ি ফেরা শুরু করি।
ফেরার পথে আমি একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ি। পলতার-ব্যারাকপুর নিকটবর্তী সংলগ্ন অঞ্চলে রাস্তা ঠিকঠাক ছিল না,ফলত সেখানে আমি দুর্ঘটনায় পড়ি এবং আমার আঙ্গুলে এবং শরীরে আঘাত পাই। এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। কারণ ওই সংলগ্ন অঞ্চলে ছিল সিপিএমের পার্টি অফিস। এখনো মানুষ আছেন। তারা চলে আসেন। আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করেন, সমস্ত ব্যবস্থা তারা করেন। তারপর ছোট হাতি গাড়ি করে আমাকে এবং আমার হুইল চেয়ার নিয়ে গতকাল বাড়ি পৌঁছে দেন। আমি পার্টি কর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ।

হালিসহর পৌঁছলে খবর পেয়েই পার্টিকর্মীরা ছুটে আসেন। দ্রুত আমার চিকিৎসা-মাথার স্ক্যান করান, অর্থোপেডিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পার্টিকর্মীরাই আমার দায়িত্ব নেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কমরেড কাজল দত্ত ও রাজূ গোস্বামী। এছাড়া ছাত্রযুব ও পৌরকর্মীরা আমার পাশে রয়েছেন। ধীরাজ দাস, ভোলা মিত্র, মৈনাক সেনগুপ্ত, সঞ্জীব ভক্তরা আমার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছেন।

তিনি বলেন,এই ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ না থাকলে পরে আমার ফিরতে খুবই অসুবিধা হত। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ শব্দবন্ধটির মধ্য দিয়ে তিনি একটি অনন্য দ্যোতনা সৃষ্টি করেন। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলতে তিনি তাঁর সহকর্মী, সহযোদ্ধা,কমরেডদের বলতে চান। তিনি বলেন,এই ইনকিলাব শব্দটিকে দীর্ঘজীবী অর্থাৎ জিন্দাবাদ করে রাখার জন্য, এই চেতনাটি ধরে রাখার জন্য আমি আমার সহযোদ্ধাদের কমরেড বলিনা, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলি।