অবতক খবর,২৭ ডিসেম্বরঃ বীজপুর বিধানসভার অন্তর্গত হাজিনগর ইন্ডিয়ান পাল্প এন্ড পেপার মিলের শ্রমিকদের এখন আর খাওয়া জুটছে না। বিগত ছয় মাস ধরে এই কারখানাটি বন্ধ। স্বাধীনতার আগে থেকেই এই কারখানায় ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। কারখানার অচলাবস্থার কারণে সেই সংখ্যাটি ৫০০ তে এসে ঠেকেছে।

এই পেপার মিলের সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে। কারখানার বৃদ্ধ এক শ্রমিক জানিয়েছেন,দেশের স্বাধীনতার সময় ভারত এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে স্বাধীনতার যে সমঝোতা হয়েছিল, সেটি এই পেপার মিলে উৎপাদিত কাগজেই লেখা হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার উত্তর প্রদেশ ওড়িশার বিভিন্ন সরকারি জায়গায় এই কারখানায় তৈরি পেপার ব্যবহার হতো। এমনকি পোস্টকার্ড এবং অন্তরদেশীয় বিভিন্ন পত্রের কাগজ এখানেই তৈরি হতো। কিন্তু এখন সবই অতীত।

১৮৩৬ সালে ‘নৈহাটি পেপার মিল’ নামে এই কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছিল। বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং ওড়িশা থেকে শ্রমিকরা এসে এই কারখানায় কাজ করতো। কোন কোন শ্রমিকের দুই এবং তিন পুরুষ পর্যন্ত এই কারখানায় কাজ করেছে। সেই সময় মিলের সমস্ত কিছুই অন্যরকম ছিল। তখন এই কারখানায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। সময়ের সাথে সাথে এই কারখানার পরিকাঠামো ভেঙে পড়তে লাগল,আর শ্রমিকরা বঞ্চিত হতে থাকলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে। ৭০ দশকে বহু বছর এই কারখানা বন্ধ থাকার পর বামু সরকার এই কারখানা চালানোর প্রস্তাব দেয়। ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার কারখানাটি চালু করেন। কিন্তু ২২-২৩ বছর কারখানাটি চালানোর পর সরকারও হাত তুলে দেয়। ফলস্বরূপ ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৬ সালে ব্যবসায়ী পবন আগারওয়াল এবং রাজীব আগারওয়াল মিলটি তাদের আয়ত্তে নেন। তারপর এই কারখানাটি ‘ইন্ডিয়ান পাল্প অ্যান্ড পেপার প্রাইভেট লিমিটেড’ হয়ে যায়।

এই কারখানার একজন রিটায়ার্ড কর্মী জানান এখানে এখন পেপারের বদলে পেপার জাতীয় জিনিসপত্র তৈরি হয়। যা প্যাকেট,কৌটো ইত্যাদি তৈরীর কাজে লাগে।

জানা গেছে, এই কারখানার মালিকরা ব্যবসা চালানোর জন্য বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন। সময়মতো লোন শোধ করতে না পারায় এই কারখানাটি বন্ধ হয়ে করতে হয়েছে তাদের। বিগত ছয় মাস ধরে এই কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। কারখানা বন্ধের পরে দু’মাস শ্রমিকরা বেতন পেয়েছেন। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে এই কারখানা পুরোপুরি বন্ধ। মিল চালু হলে যদি বেতন পাওয়া যায় সেই আশা নিয়ে কয়েকজন শ্রমিক রোজ এসে তাদের হাজিরা দিয়ে যান।

শ্রমিকদের অভিযোগ,বিগত ছয় মাসের ইএসআই এবং চার মাসের পিএফ-এর টাকা আটকে রেখেছেন মালিকপক্ষ।

স্থানীয় কাউন্সিলর তথা হালিশহর পৌরসভার সি আই সি জিয়াউল হক জানিয়েছেন, লোন সংক্রান্ত কিছু সমস্যার কারণে আদালত নির্দেশানুযায়ী ১লা আগস্ট ২০২২ থেকে কারখানা বন্ধ। প্রায় ৮০ কোটি টাকা লোন তোলা হয়েছিল এই মিলের জন্য।

এই জুট মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন রুটি রুজিতে টান পড়েছে এই মিলের শ্রমিকদের।