শীতের গল্প ও আমার মা
তমাল সাহা

শীতের অনেক বড় বড় গল্প পড়েছি। ঠাণ্ডা কাঁপুনি শীত অনুভব করেছি। মানুষদের ভাঙা ঘরে দেখেছি কি করে ফাঁক ফোকর দিয়ে শীত ঢোকে।
প্রথম শীতের অনুভব শিখেছি অস্কার ওয়াইল্ড-এর কাছে। ওই টানেলের নিচে দুটো আদুল গায়ের ছেলে নিজেদের জড়াজড়ি করে বসেছিল। তখন শিখেছি শরীর জড়াজড়ি করে থাকলে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ উষ্ণতা পাওয়া যায়।

সে যাই হোক আমার মায়ের কাছে শীতের কথা প্রতিবছরই শুনেছি।

কাঁটাতারের সীমান্ত পেরিয়ে আসবার পর
মা আমার কইতো, এই দেশে তেমন শীত নাই রে তমু? সব শীত কি ওই পারে রাইখ্যা আইলাম? তো! তুই তো শীতের রাতেই জন্মাইছিলি। আরে সে কী ঠাণ্ডা! তরে বাঁচানোর লিগা কত কী করছি! ঘর গরম রাখনের লিগা পাতিলে ছোট ছোট কাঠে আগুন জ্বালাইয়া রাখছি।

যাই হোক শীত এখানেও পড়তো। শীতকালে মা উঠোনে পিঠে রোদ লাগিয়ে মাটির উনুন বানাতো। আমাদের বাড়িতে ছাদ ছিল। তবে কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হতো। সেই ছাদে উঠে মা বড়ি দিত। মা বড়ি দিতে দিতে শীতের নানারকম গল্প করতো।
বলতো লাঙ্গলবন্দের স্নানের সময় খুব শীত পড়তো। এখন এইখানে কাগজে পড়তাছি গঙ্গাসাগরের মেলা হইবো। সাধুরা, নাঙ্গা সন্ন্যাসীরা কপিল মুনির আশ্রমে যাইবো। সেইখানে নাকি খুব শীত।

আবার সেইদিন কাগজে পড়লাম উত্তরপ্রদেশে প্রচণ্ড শীতে নাকি মানুষ মারা গেছে। আমি জানিনা, শীতে মানুষ মারা যায় ক্যামনে!
তুই ভাবছস দেশ কত বছর স্বাধীন হইছে? সরকার আবার হাজার হাজার কম্বল বিলাইতাছে।
স্বাধীন দেশ! মানুষের তো কাঁথা কম্বল লেপ তোষক সব নিশ্চয়ই আছে।
সরকার আবার সম্বৎসর
হাজার হাজার কম্বল বিলাইতাছে। তো এগুলি গায়ে দিয়া থাকলে মানুষ ঠাণ্ডায় মরে ক্যামনে?
খুব বয়স হইলে মরতে পারে। এইটা আমি অস্বীকার করি না।

তো সেইবার মা মারা গেল গরম কালে। মরণের আগে যখন কবিতার হাতে শেষ ভাত খাইলো তখন কইলো, অরে তমু খুব শীত লাগতাছে রে! এতো শীত আইলো কইত্থিকা, ছিল কোনখানে? কোনোকালে তো পড়ে নাই।

এইটারেই বোধ হয় কয় মরণ শীত!