অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন

মোদি তুলেছিলেন দেয়াল, মমতা গড়লেন আড়াল

শাসকের চেহারা 

তমাল সাহা

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পেলে দুনিয়ার সব শাসকের চেহারাই এক এবং অদ্বিতীয়। এক কথায় তারা হৃদয়হীন বিবেকহীন তো বটেই বেহায়া বেশরম নির্লজ্জ। তাদের চোখের উপর চামড়া থাকে না। থাকলে প্রজা শাসন কোনমতেই সম্ভব নয়।

 

দেশ শাসককে কে না চেনে, রাজ্য শাসককে কে না জানে? লিঙ্গ ভেদ হলেও তাদের চারিত্রিক সাযুজ্য থাকে।

বিশ্ব দুনিয়ার বড়দাদা ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে দিল্লির বস্তি ঢেকে দিতে ইটের দেয়াল তুলে দিয়েছিল রাষ্ট্র। যাতে ভয়াবহ দুঃসহ বস্তি জীবন বিশ্বের বড়বাবুর নজরে না পড়ে। দাঙ্গা ধর্ষণ অধ্যুষিত এই উপমহাদেশের সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে ইটের দেয়াল গড়ার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এটা ঘটেছিল যমুনা নদীর দেশ দিল্লিতে। সেটা ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০।

এবারের ঘটনা ঘটলো ৮ অক্টোবর ২০২২ ভাগীরথী পারে কলকাতায়। রাক্ষুসে মাল নদীর হড়পা বানের খরস্রোত আমাদের দেখালো জীবন্ত ভাসান পর্ব। ঘটনা জলপাইগুড়ি মালবাজার, ৫ অক্টোবর, ২০২২। চারজন নারী সহ আটজনের মৃত মুখ আমরা প্রত্যক্ষ করলাম। আহত ক্ষতবিক্ষত কতজন, নিখোঁজ কতজন কে জানে? বিশ্ব দুনিয়া জেনে গেল, প্রত্যক্ষ করলো এই জীবন্ত বিসর্জন ইন্ট্যানজিবল কালচার!!এই মৃত্যু শোক আর্তনাদ উপেক্ষা করে কলকাতার রেড রোডে প্রদর্শিত হল পাঁচ ঘন্টার ভাসান কার্নিভাল। উদ্যোক্তা রাজ্য সরকার‌। নিয়মিত সরকারি বিজ্ঞাপন প্রাপক এক সংবাদপত্র শিরোনামে লিখেছে– বর্ণময় কার্নিভালে মধ্যমণি মুখ্যমন্ত্রী।

এই বিশাল বর্ণাঢ্য প্রদর্শনী থেকে বাংলার একটি কলঙ্কিত অধ্যায়কে দূরে সরিয়ে রাখতে রেড রোজের অদূরে ৬০০ দিন অতিক্রমের মুখে অবস্থানরত যোগ্য প্রার্থীদের ধর্ণামঞ্চকে আড়াল দিতে গণতান্ত্রিক সাদা কাপড়ের ওয়াল তৈরি করা হলো। বিখ্যাত সংবাদপত্রটি লিখেছে একাধিক পুজো কমিটির ট্যাবলোতে কেবলই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। মুখ্যমন্ত্রীর লেখা দু তিনটি গানের সঙ্গে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। কিছু কিছু তোষামুদে কমিটি আগ বাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছে একতারা ও দোতারা। অতি চাটুকারিতায় ব্যানারে লেখা হয়েছে ‘দিদি,’ কোনটিতে ‘মাতৃমা’। মুখ্যমন্ত্রী কাঁসর ঘন্টা বাজিয়েছেন, শিল্পীদের সঙ্গে নেচেছেন। কলকাতা পুলিশের সিপি, রাজ্য পুলিশের ডিজি বিভোর হয়ে মোবাইলে সেই ছবি তুলেছেন।

সার্বজনীন উৎসব একক মাতব্বরির রাজনৈতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। শাসক মৃতদের জন্য শোক এবং প্রজন্মদের অসহায়তাকে মোটেই গুরুত্ব দেননি। কার টাকায় এই পিতৃশ্রাদ্ধ আয়োজিত হলো?

ফরেন ডেলিগেটরা যাতে অবস্থানরত অসহায় ‘উমা’দের দেখতে না পারেন তার জন্য সাদা কাপড়ের ওয়াল তৈরি করা হয়েছে কিন্তু ফরেন ডেলিগেট লেখা ঘেরাটোপগুলিতে মাত্র গুটিকয়েক ফরেনার বসেছিলেন

সাদা কাপড় কেন? এর মধ্যে কি কোন চক্রান্ত রয়েছে শোভাযাত্রা তো বর্ণময় সেখানে বর্ণময় কাপড়ের আড়াল না করে কেন সাদা কাপড়ের দেয়াল তৈরি করা হলো? কারুর শাড়িকে ব্যঙ্গ করার জন্য কি এই চক্রান্ত করা হয়েছে? সাদা কাপড় দিয়ে কফিন ঢাকা হয়,সাদা কাপড় বৈধ ষব্যের প্রতীক। এখানে কি কোনো তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?

রাজা তোর কাপড় কোথায়? কবি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে পারেননি। তার কাপড় রক্ষিত ছিল এই কলঙ্কিত অধ্যায়কে ঢাকা দেবার জন্য, দেয়াল গড়ার জন্য তা কবি জেনে যেতে পারলেন না!