অবতক খবর,৩ নভেম্বর: উত্তর চব্বিশ পরগনার হুগলি নদীর ধারের শ্যামনগর জনপদটি বহু কারণেই বিখ্যাত। তার অন্যতম, শ্যামনগর কালীবাড়ি। উনিশ শতকের গোড়ায়, বৈশাখী পূর্ণিমায় কলিকাতা পাথুরিয়াঘাটার তৎকালীন জমিদার রাজা গোপীমোহন ঠাকুর ব্রহ্মময়ী মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে অনেক কাহিনী প্রচলিত। জমিদার গোপীমোহন মা কে কন্যা রূপে আকাঙ্ক্ষা করে এক মাত্র কন্যা হিসাবে পেয়েছিলেন ব্রহ্মময়ীকে। ৯ বছর বয়সে ব্রহ্মময়ীর বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। বিয়ের দিন সকালে ব্রহ্মময়ী গঙ্গা স্নানের ইচ্ছা প্রকাশ করলে পাল্কিতে চাপিয়ে ব্রহ্মময়ীকে গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হয়, কন্যা সহ পালকি গঙ্গায় চোবানোর পরে আর ব্রহ্মময়ীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই সংবাদে গোপীমোহন কন্যার শোকে দিনকয়েক শোকাহত ছিলেন। পরে তার কন্যা ব্রহ্মময়ী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন যে তাকে বর্তমান শ্যামনগরের মূলাজোড়ের গঙ্গার পাড়ে জঙ্গলে মূর্তি রূপে পাওয়া যাবে। স্বপ্ননির্দিষ্ট স্থানে পাষাণময়ী এক দেবীমূর্তি পাওয়া যায়, মৃত্তিকায় অর্ধ প্রোথিত, কষ্টিপাথরের দক্ষিণা কালীমূর্তি, পদতলে শায়িত মহাদেব বিগ্রহ। এরপর গোপীমোহন ঠাকুর ১২১৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে বৈশাখ সেখানেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরের বিগ্রহটি প্রতিষ্ঠিত নয়। ব্রহ্মময়ীর মন্দিরটি নবরত্ন মন্দির, এরকম মন্দির পশ্চিমবঙ্গে খুব বেশী দেখা যায়নি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে মন্দিরের মূর্তির ছবি তোলা নিষিদ্ধ। মন্দিরের ডান ও বাম পাশে সারিবদ্ধ দ্বাদশ শিবের মন্দির রয়েছে। শিব মন্দিরগুলো অবশ্য গোপীমোহন পুত্র প্রসন্ন কুমার সম্পূর্ণ করেন। কালী মন্দিরসহ শিবমন্দির গুলি সব পশ্চিমমুখী। মন্দিরে সোপানের কাছে দুই স্তম্ভের উপর শ্বেত পাথরের দুই সিংহ মূর্তি এবং দুটি বিষ্ণু মূর্তি রয়েছে। অনুমান করা হয়, এই মূর্তিদুটো ব্রহ্মময়ী মূর্তির চাইতেও প্রাচীন, এদের রাজশাহীর কোন জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির সময় পাওয়া যায়। মূল মন্দিরের পেছন দিকে রয়েছে রাধাগোবিন্দের মন্দির এবং বানেশ্বর শিব মন্দির।
কথিত আছে, রানী রাসমনির নদী পথে বজরায় করে নবদ্বীপ থেকে কলকাতার দিকে যাবার সময় এই মন্দিরটি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এরপরে এই মন্দির এর অনুকরণেই তিনি দক্ষিণেশ্বরে মন্দির নির্মাণ করেন। হিসেব বলছে, দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির এই কালীমন্দিরের থেকে প্রায় ৫০ বছর পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়াও এই মন্দিরকে ঘিরে বহু কাল্পনিক উপকথা প্রচলিত রয়েছে যেমন, সাধক রামপ্রসাদ নদী পথে যাত্রা করার সময় তার কাছে গান শোনার ইচ্ছে প্রকাশ করেন মা ব্রহ্মময়ী এরপরই বিগ্রহ সহ গোটা মন্দিরটি পশ্চিমে নদীমুখী ঘুরে যায়। শোনা যায়, সাধক বামাক্ষ্যাপা এই মন্দিরেতে এসে কোনও এক সময় মাতৃ সাধনা করেছিলেন।

দীপান্বিতা অমাবস্যায় করোনাকালে সম্পূর্ণ সরকারি বিধি নির্দেশিকা মেনে পূজিত হবেন মা ব্রহ্মময়ী। মন্দিরেতে প্রবেশের দ্বারে থাকবে স্যানিটাইজেশন এর ব্যবস্থাএকইসাথে মাক্স পরিধান বাধ্যতামূলক। ভক্তদের ভীর ও জামায়েত রুখতে মন্দির কর্তৃপক্ষ এবছর ভোগের ব্যবস্থা করবেন না।