অবতক খবর,২২ জুনঃ শেষ পর্যন্ত বিরোধীরা সর্বসম্মত রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী খুঁজে পেয়েছেন। তিনি হলেন যশবন্ত সিনহা। তাদের সেই পথ খুঁজে পাওয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন শরদ পাওয়ার। ‌পরোক্ষভাবে তৃণমূল দল তার সহায়ক শক্তি হয়ে উঠেছে। অন্যান্য বিরোধীদলেরা এতে মান্যতা দিয়েছেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মুখপত্রে যশবন্ত সিনহা  রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী দলের সর্বসম্মত প্রার্থী তা শিরোনামে চলে এসেছে।

বামেদের বুঝতে পারা সাধারণ মানুষ তো বটেই অল্প রাজনৈতিক জ্ঞানবিশিষ্ট মানুষদেরও বুঝতে পারা কঠিন হয়ে পড়ছে ক্রমাগত। ভারতবর্ষের মতো উপমহাদেশে রাষ্ট্রপতির চরিত্র, মূল্যবোধ কেমন হওয়া উচিত এই প্রশ্ন জনমনে দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী পাণ্ডিত্যে মহান হতে পারেন, অর্থনীতি ও বদেশ নীতিতে মহাজ্ঞানী হতে পারেন কিন্তু জনগণের কাছে তার পরিচিতির প্রধান বিষয়টি কি? তিনি রাজনৈতিক আদর্শে সৎ হবেন, তিনি কি দল বদলু হবেন? সোজা কথায় তিনি কি বিজেমূল হবেন? যে মানুষটির ভাবধারা সমাজবাদী চিন্তায় সম্পৃক্ত, সে কি করে ক্রমান্বয়ে সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী দলের সঙ্গে যুক্ত হয়? এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

বামপন্থীরা এসব ভাববেন না, গণতান্ত্রিক অধিকার হননকারী দুর্নীতিগ্রস্ত কামাইবাজিতে পরিপূর্ণ একটি দল কৌশলজনিত কারণে নিজেকে সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেকে গ্রাহ্য করে তুলবেন, লাইম লাইটে আনযেন বামপন্থীরা তাতে মদত দেবেন? তারা কি সেই ফাঁদে পা দেবেন?? এ কি লেনিনবাদী মার্কসবাদী মাওবাদী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ? এসব মানা যায়? যে দলটির বিরুদ্ধে তারা ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয়ভাবে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে, তাকে মান্যতা দেবেন? তারমানে তাদের যে রাজ্য ভিত্তিক প্রদেশ ভিত্তিক লড়াই যে সমালোচনা এসব কি লোক দেখানো?

বিরোধী রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর জনকল্যাণমূলক ভূমিকা কি? এটি তারা বিচার করবেন না? এই প্রার্থীকে সমর্থন না করলে বিরোধী শক্তির কি হতো? মহাভারত কি এমন অশুদ্ধ হতো?

বিরোধী প্রার্থী হিসেবে মনে করা যাক রাষ্ট্রপতির পদটি তিনি অর্জন করলেন।তার দেহে তো বর্তমান শাসক শক্তির রক্ত বর্তমান। তিনি সেদিকে ঝুঁকে থাকবেন কিনা এটা নিশ্চিত হলেন কি করে বিরোধী বাম চিন্তা মনস্ক দলেরা? সত্যিই কি এই বিরোধী প্রার্থী অসাম্প্রদায়িক? সত্যিই কি তিনি রাষ্ট্রের কল্যাণ চান? মন্ত্রী হিসেবে তার কি ভূমিকা ছিল সেই দিকটি তারা বিবেচনা করবেন না? সেটি কি ভারতীয় জনস্বার্থে গিয়েছে কোনোদিন? তৃণমূল সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হিসেবে তিনি বঙ্গীয় সরকারের দুর্নীতি, ছাত্রদের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকারকে পদদলিত করেছে তাদের পণ্য হিসাবে গণ্য করে কামাই করেছেন, এই যোগ্য প্রার্থীদের হতাশার মধ্যে ডুবিয়ে দিয়েছেন সে বিষয়ে কি তিনি রাজনৈতিকভাবেই কোনো প্রতিবাদ করেছিলেন, তার কন্ঠস্বর কি শোনা গিয়েছে? ঠ তিনি তো ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিয়ে স্নান করেছেন। তিনি এখন শুদ্ধ হয়ে গেছেন? বিরোধীরা এসব জানেন না?

রাষ্ট্রপতি পদের জন্য লড়াকু বিরোধী প্রার্থী কি বিরোধী শক্তির কাছে ওয়াদা করেছেন যে তিনি রাজনৈতিক মুক্ত কন্ঠস্বরের পক্ষে, তিনি কি জানিয়েছেন রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য তাদের পক্ষে আছি, তিনি কি বলেছেন ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা জনিত যে চক্রান্ত চলছে তার বিরুদ্ধে আমি, দলিতদের যে অসহায়তা তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি যথার্থ ভূমিকা গ্রহণ করবো? তিনি কি বলেছেন ,ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন ভারতের প্রথম নাগরিক। নাগরিক স্বার্থে আমার লড়াই জারি থাকবে? কোনোদিনও কি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি এমন উদাহরণ রাখতে পেরেছেন? এই প্রার্থী কি খেটেখাওয়া মজদুর কৃষকদের পক্ষে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে আনা আইনকে সমর্থন করবেন না– বিরোধী দলদের এসব কি তিনি জানিয়েছেন? তবে তার পিছনে বামেদের এই লেজুড়বৃত্তির কারণ কি?

এক পোড়-খাওয়া বাম রাজনৈতিক ব্যক্তি বলেন, বামেরা যদি সমর্থন না করত তবে একঘরে হয়ে যেত। আশ্চর্যজনক এইসব কথাবার্তা। বামেরা তো চিরকালই একঘরে। একঘরের ভাবনাতেই তো তাদের লড়াই করতে হবে। দেশে দেশে সর্বত্রই বামেরা একঘরে। দেশে বিদেশে মহাদেশ প্রতিটি তথাকথিত রাজনৈতিক দলের লড়াই চিরকালই বাম শক্তির বিরুদ্ধে। ফলত তারা চিরকালই একঘরে। বামেরা একঘরে না হয়ে কি দো-আঁশলা জীবনবৃত্তি পরিচালনা করতে চান?

উল্লেখ্য যশবন্ত সিনহার পুত্র জয়ন্ত সিনহা হাজারীবাগ কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ। তিনি জানিয়েছেন, পিতা বিরোধী দলের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন সেটি রাজনৈতিক লড়াই। আমি বিজেপি কর্মী। কর্মী হিসেবে যথাকর্তব্য আমি পালন করব সে পারিবারিক সম্পর্ক যাই হোক না কেন।