অবতক খবর :: মোথাবাড়ি ::     শুধু এ জেলার মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলেন না সফিকুল ইসলাম। এবার তিনি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পড়ুয়াদের সাহায্য করলেন। বলিউড অভিনেতা সোনু সুরের পথে হাঁটলেন তিনি। বেঙ্গালুরুতে আটকে থাকা নার্সিং পড়ুয়াদের ফিরিয়ে দিলেন তাঁদের পরিবারের কাছে। শুধু এ জেলারই নয়, এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ২০ জনকে নিজের খরচে বিমানে করে দমদমে এয়ারপোর্টে নিয়ে আসেন। সেখানে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পড়ুয়াদের শুভেচ্ছা জানান সফিকুল। পরে সেখান থেকেও নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। সফিকুলের এই উদ্যোগে খুশি পরিবারের লোকেরা।

লকডাউনের শুরু থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন সফিকুল। ত্রাণ দেওয়া থেকে শুরু করে বিনা পয়সার হাট বসানো, একাধিক উদ্যোগ তিনি গ্রহণ করেছেন। কালিয়াচকে হেন কোনও এলাকা নেই, যেখানে তাঁর হাতের ত্রাণ পৌঁছয় নি। প্রায় সর্বত্রই যথাসাধ্য সহযোগিতা করছেন মোথাবাড়ি প্রাক্তন প্রধান তথা কালিয়াচক-‌২ ব্লকের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ সফিকুল ইসলাম, তার বাইরে নিজের উদ্যোগে একের পর এক কাজ করে চলেছেন। এত দিন নিজের ব্লক-‌সহ পাশের দুই ব্লক কালিয়াচক-‌১ ও ৩ ব্লক সীমাবদ্ধ ছিলেন। এবার জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যে পৌঁছে গেলেন। খবর আসে মালদার কিছু পড়ুয়া বেঙ্গালুরুর বিএসসি নার্সিং কলেজের ছাত্রাবাসে আটকে রয়েছেন। কলেজ লকডাউনের শুরুতেই ছুটি হয়ে যায়। এ রাজ্যের বেশ কিছুজন আটকে ছিলেন সেখানে। সফিকুলের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর খবর যায় মালদার পড়ুয়াদের কাছে। তাঁরা প্রথমে সফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি প্রথমে মালদার ৯ জনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। তাঁদের বিমানের টিকিটও করিয়ে ফেলেন। মালদার পড়ুয়াদের দেখাদেখি অন্যান্য জেলার পড়ুয়ারাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে একসঙ্গে তাঁদেরও ফিরিয়ে আনেন তিনি।

জানা গেছে, মালদার কালিয়াচক-‌১ ব্লকের রয়েছেন ৩ জন পড়ুয়া, ইংলিশবাজার ব্লকের ৪ জন, কালিয়াচক-‌৩, পুরাতন মালদা ও রতুয়া ব্লকের ১ জন করে। বাকি ১১ জন রয়েছেন মুর্শিদাবাদ-‌সহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার। মালাদার পড়ুয়াদের মধ্যে মঙ্গলবাড়ির ঝিলিক মন্ডল, শহরের ঘোড়াপীরের সৌমি বর্মন, কালিযাচকের নবীনগরের সাবানা ফারহিনরা বলেন,‘‌সফিকুল একজন প্রকৃত মানব দরদি ও তাঁর মহানুভবতায় আপ্লুত । এ যেন দূত ! উনার কথা আমরা ফেসবুকে দেখতে পাই। তারপর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজিও হয়ে যান।

জানা গেছে, এ জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে সফিকুলের। সফিকুল ইসলাম বলেন,‘‌টাকাটা বড় বিষয় নয় আমার কাছে। ওই পড়ুয়াদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে পেরেছি, ওদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি, এর থেকে অনাবিল আনন্দ আর কী হতে পারে!‌’‌ বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু থেকে বিমান দমদম এয়ারপোর্টে পৌঁছয়। সফিকুল নিজে হাজির থেকে পড়ুয়াদের সকলকে এদিন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন খুশি পরিবারের লোকেরাও। এতদিন বাদে সন্তানদের কাছে পেয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি তাঁরা। সফিকুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুভকামনা জানান তাঁরা। তাঁরা বলেন, এই পরম সেবা কখনো ভূলবনা। সফিকুল আরো বড় হোক।