নয়া দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীর ঝুপড়ি বস্তিতে বুলডোজার চালিয়ে দিল রাষ্ট্র।

বুলডোজারের গদ্য
তমাল সাহা

জাহাঙ্গীরপুরীতে বুলডোজারের দুঃসাহসী কার্যকলাপের পর আমি বুলডোজার শব্দটি নিয়ে পড়াশোনায় মগ্ন হয়ে পড়ি।

আমি প্রথমে বিভিন্ন পৌরসভায় চলে যাই। পিডব্লিউডি বিভাগে যোগাযোগ করি। বিভাগীয় সুপারভাইজার বলেন, আমাদের নিজস্ব কোন বুলডোজার নেই। রাস্তাঘাট নির্মাণ করে কন্ট্রাক্টরেরা– যাদের আপনারা বলেন, ঠিকেদার। ওরা এ বিষয়ে বিশদ জানেন। আপনি ওনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

প্রৌঢ়বেলা, হাত-পায়ে তেমন জোর নেই। মেরুদণ্ড না ভাঙলেও কোমর দুই হাঁটু কমজোরি হয়ে গিয়েছে। ‌এখন এখানে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। আমার ক্লান্ত চোখ মুখ দেখে টুকুন বলে, দরকার নেই। টুকুন আমার পাকু মেয়ে।
বলে, আমি তো আছি, নাকি! কোনো চাপ নেবে না, টেনশন নেবে না। চাপ আর টেনশন এই শব্দ দুটি হাত তুলে মুখ কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করে বলা টুকুনের অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টুকুন বলে,বুলডোজারের চেহারা বহুপ্রকার। একটি ভারী ট্রাক্টরকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয় বুলডোজার বিষয়ে। চাকা দেখলেই তুমি ঘাবড়ে যাবে। বিশাল বিশাল টায়ারের চাকা। খাঁজ কাটা। দেখলেই ভয়। তোমরা বল না, আতঙ্ক! সেটা তৈরি হয়ে যাবে। ‌ বুলডোজারের সামনের দিকে থাকে লোহার একটি বিশাল রোলার। কারো সামনে থাকে জিরাফের গলার চেয়ে বড় একটা মজবুত গলা–নড়াচড়া করা যায় এমন একটি যান্ত্রিক গণ্ডদেশ। গলার সঙ্গে লাগানো বড় একটা দাঁতওয়ালা পাত্র। এই পাত্রের কাজ থাবড়ানো ও খামচানো এবং ধাক্কা মারা। কোন বুলডোজারের মাথায় ক্রেন ও লোহার মোটা শেকল লাগানো থাকে। তার সঙ্গে ভারী লৌহ বস্তু। ওই যে পাইলিং বলে না!ওর কাজ বড় বড় মোটা শাল বল্লা মাথা থাবড়ে মাটিতে বসিয়ে দেওয়া।

যুদ্ধ ট্যাংক দেখেছ আমাদের সেই নামজাদা প্যাটন ট্যাঙ্ক, পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হয়েছিল! এই ট্যাঙ্কের মতো মোটা চওড়া লোহার চাদর লাগানো থাকে কোনো কোনো বুলডোজারের লোহার চাকায়। সে এক দৈত্যাকার ব্যাপার। বুলডোজার দৈত্যদের মতো দাপিয়ে কাজ করে।

তুমি জেসিবি মেশিনের নাম শুনেছো? এটাও একটা বুলডোজার। জেসিবি একজন ব্যক্তির নাম।

আমি বলি তাই নাকি!

টুকুন বলে, আরে শোনো,জেসিবি কোন যন্ত্র নয়,একজন মানুষের নাম। জোসেফ সিবিল ব্যামফোর্ড। এখানে মাহেন্দ্র,টাটা কোম্পানি,এসব যন্ত্র বানিয়ে থাকে। বুলডোজার শব্দটির মূল অর্থ হল না নির্মম অত্যাচার। সম্ভবত আমেরিকায় দাসদের উপর ক্রিয়াশীল অত্যাচার ও সক্রিয় নিপীড়নের প্রতীক এই শব্দটি। দুটো ষাঁড় পরস্পর গুঁতোচ্ছে এমন ছবি তো তুমি দেখেছো। বুলডোজারের কাজ অনেক দেখেছো তুমি। গুরুত্ব দাওনি। রাস্তা সমতল করতে দেখেছো। এর সাহায্যে ওই মাল তোলা, আবর্জনা গাড়িতে তোলা এইসব দেখেছো।

বুলডোজারের মূল কাজই হলো গুঁড়িয়ে দেওয়া। বুলডোজিং মানে ষাঁড়ের গুঁতো! এটা খেয়েছো কোনোদিন? তাহলে বুলডোজার মানে কি দাঁড়ালো? যে গুঁতুনি দেয়,সেই বুলডোজার। সেটা হতে পারে দৈত্যাকার যন্ত্র,আবার বর্বর রাষ্ট্র।
আরো শোনো, বুলডোজারকে প্রতিহত করা খুব কঠিন।

আমি বলি, একে প্রতিরোধ করা যাবে তবে কিভাবে?

টুকুন বলে,জাহাঙ্গীরপুরীর ভিডিওটি দেখেছো? সম্মিলিত মানুষ যখন বুলডোজার হবে এবং সক্রিয় বুলডোজার হয়ে নামবে ময়দানে,তখনই একমাত্র বুলডোজিং রুখে দেওয়া সম্ভব। জাহাঙ্গীরপুরীতে ন’টি বুলডোজার রুখে দিয়েছে খেটে খাওয়া লড়াকু ঝুপড়ি বস্তির মানুষ!

টুকুন এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। মেয়েদের নিয়ে একটি সংগঠন করার কথা ভাবছে। আমার টুকুন!