অবতক খবর,৬ আগস্ট: বীজপুরের লড়াকু নেতা যিনি সব সময় রায় পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলে এসেছেন, তা সে কোন মিছিল হোক বা মিটিং অথবা সভা, এই শহরে রায় পরিবারের বিরোধিতা যদি কেউ করে থাকেন তবে তিনি হলেন কাঁচরাপাড়ার বরিষ্ঠ তৃণমূল নেতা দিলীপ ঘোষ।

আজ যিনি তৃণমূলের হয়ে বিধায়ক হয়েছেন অর্থাৎ সুবোধ অধিকারী, তাঁর জয়ের পেছনে কিন্তু এই দিলীপ ঘোষের একটা বড় অবদান রয়েছে।
কারণ লড়াইটা ছিল দিলীপ ঘোষ বনাম শুভ্রাংশু রায়।

বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিধানসভা নির্বাচনের সময়কার বিজেপির প্রার্থী শুভ্রাংশু রায়, প্রতিটি সভা, মিছিল,মিটিং ইত্যাদিতে সমস্ত কথাতেই দিলীপ ঘোষের প্রসঙ্গ তুলে আনতেন। এমনকি দিলীপ বাবুকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়তেন না।

কিন্তু সেই সময় শুভ্রাংশু রায় এর এত আক্রমণ করা সত্বেও দিলীপবাবু ভয়ে দমে যাননি।

তিনি তাঁর লড়াই চালিয়ে গেছেন।
এই বীজপুর তথা ব্যারাকপুর লোকসভা অঞ্চলে এই রায় পরিবারের বিরুদ্ধে যদি কেউ মুখ খুলে থাকেন তবে তিনি হলেন দিলীপ ঘোষ।

অন্যদিকে তাঁর একটাই লক্ষ্য ছিল, যেভাবেই হোক সুবোধ অধিকারীকে বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জেতাতেই হবে।

এই অঞ্চলের একসময়ের জনদরদী নেতা মৃণাল সিংহ রায়ের (আবুদা) খুব কাছের লোক ছিলেন দিলীপবাবু।

তিনি বলেন,”আবুদাকে যেভাবে ষড়যন্ত্র করে মারা হয়েছিল,সেই কথা ভাবলে তাঁর এখনো চোখে জল আসে। কিন্তু সুবোধ অধিকারী জেতার পর সেই চোখের জল একটু হলেও ধরেছে।”

এই অঞ্চলে দিলীপ ঘোষ একজন বিতর্কিত নেতা। অনেকেই তাঁকে পছন্দ করেন, আবার অনেকে করেন না। কারণ একটাই, সোজা কথা তিনি সোজাভাবে মুখের উপর বলেন। সেই কারণেই তিনি কিছু মানুষের চক্ষুশূল।
তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, তিনি বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী এবং যুব কমল অধিকারী ছাড়া আর কারো কথাই শোনেন না। তাঁরা তাঁর থেকে বয়সে ছোট হলেও, তিনি তাঁদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন।

তিনি বলেন, “সাইকেল চালিয়ে আবুদার বাড়িতে যেতাম। সেই কথা হয়তো কেউ জানে না। জানেন সুবোধ অধিকারী এবং তাঁর পিতা সন্তোষ অধিকারী।”

রায় পরিবার দিলীপ ঘোষকে জব্দ করার অনেক চেষ্টা করেছিল। রায় পরিবারের ষড়যন্ত্রে ভোটের আগে তাঁকে আটক পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু খবর পেয়েই সাথে সাথে তাঁকে ছাড়াতে চলে যান নৈহাটি বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য্য, বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী।
এমনকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত ফোন করেছেন তিনি যাতে ছাড়া পান।
সেই সময়ে যেহেতু সমস্তটাই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল, তাই তাঁকে ছাড়ানো সম্ভব হয়নি।

ভোটের আগে দিলীপ ঘোষকে দেখা যায় প্রত্যেকটি পাড়ার অলিতে-গলিতে তিনি প্রচারকার্য সেরেছেন তাঁর প্রিয় প্রার্থী সুবোধ অধিকারীকে জেতানোর জন্য।
বীজপুরের সমস্ত ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে তিনি যেভাবে কাজ করেছেন তা সত্যিই অকল্পনীয়।
২০১৯-এর ২৩মে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর দিলীপ ঘোষের বাড়িতে হামলা চালায় বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এমনকি তাঁর বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্যকে মারধর করা হয়। সেই দিন গুলো দিন ভুলে যান নি। কিন্তু এত কিছুর পরেও তাঁর কণ্ঠ রোধ করা যায়নি, তিনি সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছেন।

মা তাঁরার কাছে তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যাতে সুবোধ অধিকারী এই বীজপুর অঞ্চলে বিধায়ক রূপে আসীন হতে পারেন। মা তাঁরা তাঁর কথা শুনেছেন, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তাঁর মনস্কামনা পূর্ণ করেছেন।

তাই তিনি আবারো চলে গেছেন তাঁরাপীঠে, মা তাঁরার কাছে, মায়ের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা,ধন্যবাদ জানাতে।
মা তাঁর মানত পূর্ণ করেছেন। তাই তিনি মাকে নতুন বস্ত্রে,গোলাপের মালায় এবং রূপোর টিপ পরিয়ে সুসজ্জিত করেছেন।
সেই সঙ্গে মাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সুবোধ অধিকারী যেন প্রত্যেকটি মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন।
সেই সঙ্গে তিনি মায়ের কাছে এও কামনা করেছেন, আগামীদিনে বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী লোকসভার সাংসদ হতে পারেন।

কাঁচরাপাড়া ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিলীপ ঘোষ, তিনি নিজের চাকরি জীবন থেকে বিআরএস নিয়ে দলের জন্য নিরলস পরিশ্রম করছেন।
দলের প্রতি, বিধায়ক সুবোধ অধিকারীর প্রতি তাঁর অবদান ভুলতে পারবেন না বীজপুরবাসী।