বালিশ হয়ে গেল মারণাস্ত্র,পূজা খুন হল বালিশ চাপায়। বালিশও মারণাস্ত্র হতে পারে। শুনুন,বালিশের কাহিনী…..

বালিশ-এর কবিতা
তমাল সাহা

হঠাৎ দেখি আজ মাথার নিচে বালিশ নেই—
মেয়ে আমার বালিশ ছাড়াই শুয়ে আছে।
বালিশের ওয়াড়ে লেগে আছে
চোখের জল গড়ানো দাগ।

বাবা,বালিশ বানানো তো সহজ!
হ্যাঁ,তাতো সহজই বটে।
কাপড় দিয়ে সাইজ মত খোল তৈরি কর,
তারপর শিমুল তুলো ভরে দাও।
ভরা শেষ—
মুখটা সেলাই করে দাও।
ধুনুরি তার হাতের ওই সরু লাঠিতে
বালিশটাকে আলতো পিটিয়ে
সমস্ত তুলো সমানভাবে ছড়িয়ে দিলেই
ভারী সুন্দর বালিশ হয়ে যায়।

তুলোর বীজ ফেটে শিমুল তুলো উড়ে যায়…
হালকা রেশমের মতো হাওয়ায় হাওয়ায়—
বাবা, তাই না?
আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি।

বাবা,বালিশ কি মারণাস্ত্র হতে পারে?
ঘাতকের হাতের কোনো অস্ত্র?
নরম বালিশ কি হতে পারে কোন মৃত্যুর হাতিয়ার?
বাবা,বালিশ কি মাথার নিচে, মুখের উপরে দুজায়গায় থাকতে পারে?

মাথার নিচ থেকে বালিশ সরিয়ে মুখে চাপা দিয়ে ওরা পূজা দি-কে মেরে ফেলেছে, বাবা!
পূজা দি-র দম বেরুতে চাইছিল না।
পূজা দি কি ছটফট করছিল,
হাত-পা ছুড়ছিল,
আর্তনাদের সে কী দুর্মর চেষ্টা!
কিন্তু একটুও স্বর বেরুচ্ছিল না।
কারা যেন পূজা দি-র হাত দুটো পা দুটো চেপে ধরে রেখেছিল, বাবা!

পূজা দি-র গায়ের রং কালো ছিল,
পূজা দি-র বাবা ভ্যান চালাতো।
অনেক কষ্টে পঞ্চাশ হাজার টাকা জোগাড় করে দিয়েছিল পূজা দি-র বর কার্তিকদাকে।
কার্তিকদা মোটরবাইক কিনেছিল সে টাকায়।

বাবা!ওই দেখো শিমুল তুলো বীজ ফেটে উড়ে যায় হাওয়ায় হাওয়ায়…

বাবা,পূজা দি কালো ছিল।
নগ্ন কালী, উলঙ্গ কালী,সেও তো কালো।
পূজা দি-কে কেউ কোনোদিনও বলেনি—
এক হাতে মুন্ড ধরো, অন্যহাতে খড়্গ তোলো।

বাবা, মনে পড়ে শীতের শেষে মিঠে রোদ বিকেল বেলায়।
তুমি আমায় দেখিয়েছিলে শিমুলের লাল ফুল!
বীজ ফেটে রেশমি তুলো উড়ে যায়,
তুলো ভাসে হাওয়ায় হাওয়ায়…

সেই নরম তুলোর হৃদয়ে লুকিয়ে থাকে খুন ও হত্যা!
মাথার নিচে বালিশের এ কোন গোপন ষড়যন্ত্র,সে নাকি আশ্রয়দাতা?

চিতায় শুয়ে পূজা—
চোখমুখের আর্তি দেখুন,
কী ভীষণ বাঁচার ইচ্ছে ছিল!
ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে লেলিহান আগুন…