অবতক খবর,৯ জুলাইঃ গত ৪ জুলাই২২, সোমবার বাইক দূর্ঘটনায় মাথায় আঘাত নিয়ে হাবড়া নিবাসী ৫৮ বছরের মঞ্জু বালা বিধান নগরের আমরি হাসপাতালের ভর্তি হন। তাঁকে তৎক্ষণাৎ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। কিন্তু তাঁর অবস্থার অবনতি শুরু হয়। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন মঞ্জু দেবীর বেঁচে ওঠার আশা ক্ষীণ।

৬ জুলাই পরিবারের পক্ষ থেকে গণদর্পণের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো ব্যাপারটা জানিয়ে মরণোত্তর দেহদানের কথা জানায়। তখন গণদর্পণের পক্ষ থেকে মঞ্জু দেবীর পরিবারকে অঙ্গদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা এই প্রস্তাবে রাজী হয় এবং এও জানায় যে মঞ্জু বালা ও তাঁর স্বামী রমেশ কিশোর ভক্ত দুজনেই ১৯৯৪ সালে বিধান নগরে করুণাময়ীতে এক মরণোত্তর দেহদান অঙ্গীকার শিবিরে অঙ্গীকারবদ্ধ হন। এছাড়াও জানান মঞ্জু দেবীর একমাত্র মেয়ে রিয়া এই অবস্থাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। ফলে মঞ্জু দেবীর পরিবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা জানান

রিয়ার কাউনসিলিং প্রয়োজন। গতকাল ৭ তারিখ গণদর্পণের পক্ষ থেকে রিয়ার সাথে কথা বলে। রিয়া রাজি হয়। কিন্তু মানসিকভাবে খুবই ভেঙ্গে পড়ে। গতকাল ৮ জুলাই২২, শুক্রবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে আইমরি হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে মঞ্জু দেবীর মস্তিষ্ক কান্ডের মৃত্যু ঘটে গেছে। এরপর মঞ্জু দেবীর স্বামী রমেশবাবু হাসপাতাল কর্তপক্ষকে জানান যে উনি ওনার মৃত স্ত্রীর অরগ্যান দান করতে চান এবং সেই মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

আমরি হাসপাতাল সাথে সাথে ROTTO (Regional Organ & Tissue Transplant Organisation)–র যোগাযোগ করেন এবং সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যেহেতু আমরি হাসপাতালে অরগ্যান রিট্রিভ করার ব্যবস্থা না থাকায় ROTTO (Regional Organ & Tissue Transplant Organisation)–র ব্যবস্থাপণায় বিশেষ অ্যাম্বুলেশনে মঞ্জু দেবীর মরদেহ আমরি থেকে এস এস কে এম হাসপাতালে গ্রীন করিডরের মাধ্যমে রাত ৮ নাগাদ স্থানানতরিত করা হয়।

যাত্রাপথের সময় ছিল মাত্র ৯ মিনিট। বর্তমানে মঞ্জু দেবীর দেহ ট্রমা কেয়ার ব্লিডিং-এর সাত তলায় সি সি ইউ-তে ভেন্টিলেশনে রাখা আছে। আগামীকাল বেলা ১২টার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে ROTTO (Regional Organ & Tissue Transplant Organisation)–র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মঞ্জু দেবীর পরিবার থেকে গণদর্পণকে জানায় যে অঙ্গদানের পর তারা চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থে মঞ্জু দেবীর মরদেহও দান করতে চান। সাধারণত অঙ্গদানের পর মরদেহ গ্রহণ করায় বাস্তবিক কিছু অসুবিধা আছে। যায় না, এটা নয়। এইসব ক্ষেত্রে এইধরণের মরদেহ স্কেলিটান অর্থাৎ কঙ্কাল করা হয়। গণদর্পণ এই কঙ্কাল করার প্রস্তাব নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান ডাঃ কল্যাণ ভটাচার্যের সাথে যোগাযোগ করে। ডাঃ কল্যাণ ভটাচার্য সম্মতি জানান।

পরে জানান যে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ জানান যেহেতু পোস্ট মর্টেম কেসের মরদেহ নিতে গেলে পুলিশের নো অবজেকশন প্রয়োজন। গণদর্পণের পক্ষ থেকে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তারা জানায় যে পোস্ট মর্টেমের পরে মরদেহ মৃতের নিকটজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর তারা সেই দেহ কবর দেবে না পোড়াবে নাকি দান করবে, তা মৃতের নিকটজনের ব্যাপার।

এই কথা জানানোর পর ডাঃ কল্যাণ ভটাচার্য জানান নিয়ম নেই এবং পরবর্তী সময়ে আইনি সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এইটা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক। যেখানে অরগ্যান নেওয়া হচ্ছে সেখানে সমস্যা নেই তাহলে মরদেহ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন আইনি সমস্যা হতে পারে না। স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে গণদর্পণকে নেওয়া যেতেই পারে এতে কোন বিধিনিষেধ নেই।

গণদর্পণ মঞ্জু দেবীর দেহদান বাস্তাবায়িত করার জন্য চেষ্টা করবে। এই ঘটনা ROTTO (Regional Organ & Tissue Transplant Organisation)–কে জানানো হয়। তারা জানিয়েছেন এই ব্যাপারে সাহায্য করবেন।অপেক্ষা করতেই হবে কিছু ঘন্টার জন্য।