আজ সেই আনলাকি থার্টিন!

এ বছর কাশীপুর-বরানগর রাষ্ট্রীয় গণ-হত্যাকাণ্ড ৫২ বছরে পদার্পণ করলো। রাষ্ট্রের মদতে লুম্পেন-মস্তানরাও এতে যোগ দিয়েছিল। যোগ দিয়েছিল রাজনৈতিক বিরোধী দল। ১২-১৩ আগস্ট,১৯৭১ দুদিন ধরে চলেছিল নকশালবাদীদের হত্যা করার পৈশাচিক উল্লাস।
নিহত শহিদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধাঃ

নিহতদের ভিড়ে হাঁটিতেছি
তমাল সাহা

রাষ্ট্র, ভোটবাজ আর পুলিশ দেখলেই
তোদের কথা মনে পড়ে।

এ তো
হিমালয়ের পায়ের কাছে মাথানত দেশ,
ভারত মহাসাগরের জলস্রোত বহমান দেশ। ‌
এ তো আমার বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত গাঙ্গেয় উপত্যকা।

এযে বাংলার মহল্লা,
এই সোনার বাংলায় রাত্রি নামে।
সিআরপিএফের বুটের দাপটে
উড়ে যায় বাংলার ধুলো,
এক মহল্লা থেকে আরেক মহল্লায় ছুটে যায় পুলিশের জিপ।
গুড়ুম গুড়ুম শব্দে রাতের নীরব অন্ধকার
চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলে
তীব্র কম্পাঙ্কের দাপটে গল গল করে বমি করে দেয় রাতের জ্যোৎস্না।
নক্ষত্রগুলি হুড়মুড় করে আকাশ থেকে খসে পড়ে।

উজ্জ্বল রাজনৈতিক চেতনা প্রকট হয়ে গেলে কাশীপুর- বরানগরে
তোদের দেহগুলি পড়ে থাকে।
কখনো রক্তস্রোত বাড়ির দেয়াল স্পর্শ করে
গড়িয়ে গড়িয়ে নামে মাটির দিকে। ‌
কখনো রাস্তায় ধুলোগুলো তা চেটে নেয়।
কখনো রক্তপ্রবাহ রাস্তার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে ফুল হয়ে যেতে থাকে
কখনও বা জমাট বেঁধে সূর্যের আলোয় সেরে নেয় স্নান।
তোদের দেহগুলি তখন গঙ্গার জলে ভাসতে ভাসতে মোহনার দিকে চলে যায়…
মুখগুলিতে রোদ লেগে থাকে অম্লান।

তোদের মুখগুলি মনে পড়ে। ‌
চেতনায় রাত্রির কুয়াশার চাদর সরিয়ে হেঁটে যায়।
কে যেন ডেকে বলে, কাশীপুর!বরানগর! রতনবাবু ঘাট! শিলাঘাট! প্রামাণিক ঘাট!

পুলিশি রেইড এলাকা জুড়ে—
দমাদম লাথি মেরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়ে রাষ্ট্রীয় নেকড়ে।
বেয়নেটের আগায় যুবক চলে যায় কালো গাড়ির দিকে।
কাটারি চপার শাবল বল্লম হাতে বেরিয়ে পড়ে ঘাতক লুম্পেনরা।
কোনো যুবকের মাথা নেই, কারো চোখ খোবলানো,কারো পা ছিল তো হাত নেই,কারো নাড়িভুঁড়ি বার করা।
কুটিঘাট রোডে তৈরি করা হয় মঞ্চ। টাঙানো হয় তালিকা।
খুন করা হচ্ছিল আর নিহতদের নাম উঠে যাচ্ছিল তালিকায়।
তালিকায় নাম আর ধরে না।
রৌদ্রতেজ কি রোখা যায়?
যাতে শনাক্ত না করা যায়, নিহতদের মুখে মাখিয়ে ‌দেওয়া হয় আলকাতরা।
রিক্সা আর ঠেলাগাড়িতে তোলা হতে থাকে লাশগুলি। বেমালুম গায়েব হয়ে যায় তারুণ্যের শব, হায়!
জোয়ারের তোড়ে গাঙ্গেয় জলস্রোত তখন উদ্দাম।
লাশগুলি ভেসে যায় মহাসমুদ্রের দিকে।

আর এনকাউন্টারের নামে খুন।
পুলিশের শৈল্পিক নৈপুণ্য
ভেসে আছে চোখের তারায়। ‌তারপর কত ঘটনা লেখে ইতিহাস!
আঙুলের মাথায় বিদ্ধ পিনের সারি,গুহ্যদ্বারে ব্যাটন, জ্বলন্ত সিগারেটের সর্বাঙ্গ-প্রদাহ।
এতসব প্রদর্শনী শ্রাবস্তীর কারুকার্য হয়ে আছে বঙ্গনগরে।

আমি ভারতীয় আচাভুয়ো,মহাউন্মাদ।
সেইসব দৃশ্যপট উজ্জ্বল উদ্ধারে বিস্ফারিত চোখে হিমালয়ের ওপার থেকে অগ্রসরমান পৃথিবীর বৃহত্তম আলোকবিন্দুটির জন্য
বিশাল ভারতবর্ষের এই সন্ত্রস্ত জনপদে নিহতদের ভিড়ে হাঁটিতেছি।