আমরা সকলেই এখন যুদ্ধে আছি।
তুমিও যুদ্ধে আছো
তমাল সাহা।
তুমিও এখন যুদ্ধ মেতে আছো।
তুমি বললে আমি তো সেনাবিভাগে কোনোদিন নাম লেখাইনি।
নাম লেখাও আর না লেখাও তুমি এখন সীমান্তে দাঁড়িয়ে আছো।
আমার গায়ে তো জংলা সামরিক উর্দি নেই।
কাঁধে নেই মেশিন গান।
আছে, তুমি দেখতে পাচ্ছো না।
তুমি চিনারগাছের দেশে ৪৯ জন নিহত সৈনিকের বদলা নিতে চাইছো কি?
হ্যাঁ চাইছি।
বালাকোটে শত্রুর ছাউনি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাইয়ের ভেতর শত্রুপক্ষের তিনশো পঞ্চাশটি লাশ পাওয়া গিয়েছে।
তুমি খুশি তো?
বাঃ খুশি হব না? বদলা নিতে হবে না?
শত্রুকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে না?
মিগ,মিরাজ মারাত্মক যুদ্ধ বিমান–
এইগুলো আমি কখনো দেখিনি, দেখতে চাই।
আমাদের সৈনিকরা দারুণ ওস্তাদ।
এক একজন বীর।
আমি টিভিতে রোজ যুদ্ধের ক্লিপিংস দেখছি। আমার নেশা হয়ে গিয়েছে।
আমাদের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলরা টক শোতে কি দারুণ বলেন!
দেশপ্রেমে শরীর গরম হয়ে যায়।
শরীর উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে।
দেশের হাজার হাজার চাষীর আত্মহত্যার কথা তোমার মনে পড়ে?
লক্ষ লক্ষ বন্ধ কারখানার কথা তোমার
মনে পড়ে?
ভিক্ষের দুটাকা চালের কথা তোমার মনে পড়ে?
বেকার ছেলেদের কথা তোমার মনে পড়ে?
জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তোমার মনে পড়ে?
সারদা,নারদা,রাফাল এসব কেলেঙ্কারির কথা তোমার মনে পড়ে?
এর জন্য শরীর উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে না?
এর জন্য যুদ্ধ করবে না?
দেশ এখন বিপদে,
দেশকে রক্ষা করতে হবে।
আমি এখন যুদ্ধের কথাই ভাবি।
দোকান পাট,হাট বাজার সব জায়গায়
এখন যুদ্ধের কথা!
অভিনন্দনকে পাকিস্তান ফেরত দিতে বাধ্য হল তো?
তুমি কি জানো ওইদিনই আরো তিন সৈনিক নিহত হয়েছে হান্দোয়ারায়। অভিনন্দনের মুক্তির উল্লাসে ওদের খবর গুরুত্ব পায়নি,চলে গিয়েছে ভিতরের পাতায়।
এই যুদ্ধে এখনো কিন্তু কোনো রাষ্ট্রনেতা মারা যায় নি।
তুমি গুগাবাবা, সত্যজিৎ রায়ের ছবিটি দেখেছো?
জানেন তো আমি নিজে পঞ্চাশ প্যাকেট মোমবাতি কিনেছি
তিন ডজন জাতীয় পতাকা কিনেছি।
কেন?
সবাইকে বিলিয়েছি। দেশপ্রেমের বিশাল মিছিল হবে।
তিনদিন মোমবাতি মিছিল করেছি।
টাকা পেলে কোথায়?
তিনটি টিউশনি করি,সেই টাকায়।
সামরিক পোশাক নেই,উর্দি নেই, মেশিন গান নেই তাসত্ত্বেও সীমান্তে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছ তুমি।
তুমিও যুদ্ধে মেতে আছো।
ওয়ার হিস্টিরিয়া গিলেছে আমার দেশ!