অবতক খবর: এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের এমনটাই প্রশাসনিক সূত্রে খবর। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত রোধে কলকাতা পুরসভা সহ রাজ্যের অন্যান্য পুরসভাগুলি ইতিমধ্যে জন সচেতনতার পাশাপাশি মশা মারার তেল স্প্রে করছে। এই আবহেডেঙ্গি নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকাকে আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু অধিকারীর।

‘ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক ব্যক্তিদের মন্তব্য রীতিমত উদ্বেগজনক। বোঝা যাচ্ছে না ওনারা এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন কেন বিষয়টিকে লঘু করার জন্য নাকি নিজেদের অপদার্থতা, প্রস্তুতিহীনতা ঢাকতে? স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হয়তো বিএসএফের ঘাড়ে দোষ ঠেলে দেওয়া। কেন বিএসফ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মশার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারছে না। পঞ্চায়েত বোর্ডে গঠন না হওয়ায় স্বাস্থ্য দফতর কাজ করতে পারছে না এটা বিস্ময়কর। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু কিটের আকাল কি পঞ্চায়েত প্রধানরা টেন্ডার ডেকে মেটাবেন ? সম্মানীয় মহানাগরিক আবার অর্থনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন। আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষণ করে সমস্যার সন্ধান পেলেও সমাধানের খোঁজ পেলেন না’, ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে ট্যুইটে কটাক্ষ শুভেন্দু অধিকারীর ।

প্রসঙ্গত, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আসা নমুনা পরীক্ষার জন্য নাইসেডে পাঠাতে হবে, এমনই নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য স্বাস্থ্যদফতর। স্বাস্থ্যদফতরের দাবি, কলকাতার থেকেও মফস্বল ও গ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। কোন রোগী কোন প্রজাতির মশায় আক্রান্ত হয়েছেন, তা জানা অত্যন্ত জরুরি বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

গত শুক্রবার সব দফতরের সচিব, জেলাশাসক-স্বাস্থ্যকর্তা এবং বিডিওদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী। নবান্ন সূত্রে খবর, বৈঠকে মশাবাহিত রোগ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সব দফতরকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের তৎপরতা নিয়ে ডেঙ্গু নিধন শুরুর নির্দেশ দেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এমন বেশ কিছু রোগী রয়েছেন যাঁরা দু’টি রোগেই আক্রান্ত।

স্বাস্থ্য দফতরের গাইডলাইন অনুসারে, একদিনের জ্বরেই এনএস-১ (নন স্ট্রাকচারাল প্রোটিন) টেস্ট করে ডেঙ্গু পজিটিভ বোঝা সম্ভব। আবার ২-৭ দিনের জ্বর ও তীব্র মাথার যন্ত্রণা থাকলে রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা সম্ভব ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইট রয়েছে কিনা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, রোগীর রক্তে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইট থাকতে পারে। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ফের আক্রান্ত হতে পারেন সেই ব্যক্তি। তাই সুস্থ হওয়ার তিন সপ্তাহ পরও যদি রোগীর জ্বর, মাথার যন্ত্রণা ও উপসর্গ থাকে তবে ফের ম্যালেরিয়ার পরীক্ষা করতে হবে। যেসব ব্লকে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর জোড়া আক্রমণ দেখা যাচ্ছে সেইসব এলাকায় স্বাস্থ্য দফতর ইতিমধ্যে ক্যাম্প শুরু হয়েছে। র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট করে দেখে নেওয়া হচ্ছে রোগী কোন সমস্যায় ভুগছেন। তার কী ধরনের উপসর্গ।রাজ্যে ডেঙ্গুর পাশাপাশি ম্যালেরিয়ার দাপটও ক্রমশ বাড়ছে। মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে কোমর বেঁধে নেমেছে প্রশাসন।
অন্যদিকে, ‘ডেঙ্গি আগেও হয়েছে, পরেও হবে। কারণ আমরা যেখানে থাকি, সেই জায়গাটা ডেঙ্গিপ্রবণ’, রাজ্যে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের তীব্র সমালোচনার মুখে জবাব দিতে গিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

এখানেই শেষ নয়! পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘এটা আসলে চটকা রাজনীতি যেটা বিজেপি করে।’ রবিবারই ফিরহাদ হাকিমকে ‘ডেঙ্গি হাকিম’ বলে কটাক্ষ করেছেন সুকান্ত মজুমদার। তার জেরে এই প্রতিক্রিয়া ফিরহাদের হাকিমের।

কলকাতা পুরসভার মেয়র বলেন, ‘পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়। এগুলো নাটক। বিজেপি পায়ের তলায় মাটি পাচ্ছে না কারণ সুকান্ত মজুমদারের মতো নাট্যকাররা বিজেপির সংগঠনে রয়েছেন। এসব নাটকে করে ছবি তুলে লাভ নেই। মানুষের সেবা করুন।… ‘

এরই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তিনি বলেন, ‘একটা ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আছে? নেই। কলকাতায় যে কোনও একটা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে দেখান!’ সব মিলিয়ে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে খবরের শিরোনামে কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

ইতিমধ্যে কলকাতা পুরসভা ৫ হাজার বাড়িতে নোটিস পাঠিয়েছে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভা ৯০ টি মামলা দায়ের করেছে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি এবং কোল ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে পুরসভা মামলা দায়ের করেছে। পাশাপাশি ১-৫ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছে কলকাতা পুরসভা। চলতি মাসে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৮।