অবতক খবর,১৬ ফেব্রুয়ারি: দীর্ঘ ২৫ বছর পর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে চালু হতে চলেছে নৈহাটির গৌরীপুর জুটমিল। গত মঙ্গলবার এই মিল নিয়ে নিউ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিংয়ে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের ঘরে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়ে গেল। সেই বৈঠকেই মিল চালু করা নিয়ে জট কেটেছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর কার্যত নতুন ভাবে চালু হতে চলেছে গৌরীপুর জুট মিল। আর এই মিল চালুর খবরে খুশির হওয়া শ্রমিক মহলে।

ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে যে কয়েকটি মিল ছিল বা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ছিল নৈহাটি গরিফার গৌরীপুর জুটমিল। স্থানীয়দের দাবি, দেশের বৃহত্তম চটকলটি প্রথম নৈহাটিতে তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ শিল্পপতি ম্যাকলিন বেরি। একটা সময় শ্রমিকের ভিড়ে গমগম করত গৌরীপুর জুটমিল। স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলিয়ে কমবেশি প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক এই জুট মিলে কাজ করতেন। কিন্তু আচমকা তালা পড়ে মিলে। আচমকা মিল বন্ধ হয়ে গেলেও কারখানা খোলার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেয়নি তৎকালীন বাম সরকার। এরপর ভাগীরথী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। ওই কারখানার বহু শ্রমিক মারাও গিয়েছেন। কেউ আবার পেট চালানোর জন্য অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দেন কারখানাটিকে নতুন করে চালু করার। কিন্তু নানা আইনি এবং মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতায় কারখানাটি চালু করা যাচ্ছিল না। জটিলতা কাটাতে সময়ও লাগে।সেই সব সমস্যা কাটিয়ে আবার নতুন করে চালু হতে চলেছে জুটমিলটি।গত মঙ্গলবার শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নৈহাটির বিধায়ক ও সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক,গৌরীপুর জুটমিলের পাঁচটি ট্রেড ইউনিয়ন, আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়,অল বেঙ্গল তৃণমূল জুট অ্যান্ড টেক্সটাইল ওয়ার্কাস ইউনিয়নের রাজ্য সভাপতি ও বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম, শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত, শ্রম ও শিল্প পুনর্গঠন দপ্তরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান মালিক পক্ষের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের পর মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক জানান,’বাম আমলেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই গৌরীপুর জুটমিল। সদিচ্ছা থাকলে দীর্ঘ প্রায় পঁচিশ বছরের বন্ধ কারখানাও যে চালু করা যায় গৌরীপুর জুটমিল তার জ্বলন্ত উদাহরণ।’

জানা গিয়েছে, মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলে জানা গিয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে মিলের মেইনটেনেন্সের কাজ শুরু হবে। এর পর আগামী এক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে মিলের উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু হবে। দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে কারখানাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার ফলে যন্ত্রাংশের কোনও কিছুই আর নেই। ফলে একেবারে নতুন মোড়কে কারখানা চালু হবে।

জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন,’কারখানায় আগা যাঁরা কাজ করতেন তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তারপর এলাকার লোকজন কাজের সুযোগ পাবেন।’
সবমিলিয়ে জুটমিল চালুর খবরে খুশি ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক মহল।