অবতক খবর,২২ এপ্রিল,কলকাতা,সুমিত: প্রথমে কোনও পথচলতি সরল, নিঃসঙ্গ বয়স্ক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা, তারপর তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক পাতিয়ে তাঁর আস্থা অর্জন করা, তারপর তাঁকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলা যার ফলে তাঁকে থানা পুলিশের ঝামেলার ভয় দেখানো যায়, শেষমেশ সেই ঝামেলা এড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকাকড়ি বা অন্য কিছু মূল্যবান জিনিস (যেমন গহনা) হাতিয়ে নেওয়া। খুব জটিল মনে হচ্ছে? এই জটিল ছক কষেই বয়স্কদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলার ব্যবসা চালাচ্ছিল একটি চক্র।

তারপরেই গোয়েন্দা বিভাগের ওয়াচ সেকশনে সপ্তাহ দুয়েক আগে অভিযোগ আসে, ৮ এপ্রিল বেলেঘাটা এলাকায় একটি অটোরিকশার ভেতরে কয়েকজন দুষ্কৃতী এক ৭০ বছরের বৃদ্ধার কাছ থেকে কৌশলে টাকা ও সোনার গহনা হাতিয়ে পালিয়েছে। ঘটনাপ্রবাহ এমন, প্রথমে দুষ্কৃতীদের একজন বৃদ্ধার সঙ্গে যেচে আলাপ জমায় ও কথোপকথনের মাধ্যমে তাঁর আস্থাভাজন হয়ে ওঠে। দুষ্কৃতীদের দ্বিতীয়জন জেনেশুনে এক বান্ডিল টাকা বৃদ্ধার সামনে ফেলে, কিন্তু এমন ভান করে যেন অজান্তেই বান্ডিলটা পকেট থেকে পড়ে গেছে। আস্থাভাজন দুষ্কৃতী নোটের বান্ডিলটা তুলে বৃদ্ধার ব্যাগে একপ্রকার জোর করেই ঢুকিয়ে দেয়। বান্ডিলের শুধু ওপরের দিকেই এক আধটা নোট, বাকিটা বাজে কাগজ, যা বৃদ্ধা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। ‘টাকার বান্ডিল কোথায় পড়ে গেল? লাখ খানেক টাকা আছে তাতে’, বলতে বলতে খোঁজার ভান করতে থাকে দ্বিতীয় সাগরেদ। ঠিক সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় তৃতীয় ও চতুর্থ সাগরেদ, এবং টাকার বান্ডিলটা বৃদ্ধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করে। আস্থাভাজন অস্বীকার করে। তৃতীয় ও চতুর্থ সাগরেদ বৃদ্ধার কাছে আছে বলে চাপ দিতে থাকে। দুষ্কৃতীরা বৃদ্ধার সামনে এমন ভাব করে যেন তারা একে অপরের অপরিচিত। দ্বিতীয় সাগরেদ তার টাকার বান্ডিল ফেরত চায় বৃদ্ধার কাছে, তৃতীয় ও চতুর্থ সাগরেদ তাতে সুর মেলায়।

আস্থাভাজন তখন বৃদ্ধাকে পরামর্শ দেয়, ‘পরিস্থিতি বেগতিক, আপনার কাছে যা টাকা ও গয়না আছে দিন, ওদের দিয়ে সমস্যা এখানে মিটিয়ে ফেলি, নাহলে পুলিশের ঝামেলায় ফেঁসে যেতে পারেন’, ইত্যাদি। ঘাবড়ে গিয়ে বৃদ্ধা হাজার চারেক টাকা এবং দুটি সোনার বালা তুলে দেন তাদের হাতে। সেটা নিয়ে দ্বিতীয় সাগরেদ ও বাকি দুজন চলে যায়। অদ্ভুত ব্যাপার, মূল টাকার বান্ডিল কিন্তু ফেরত চায় না তারা। ঘটনার আকস্মিকতায় সরলমনা মহিলার মনে এ নিয়ে কোনও প্রশ্ন জাগে না। সুযোগ বুঝে সরে পড়ে আস্থাভাজনও।

বলা বাহুল্য, গোটা ঘটনাটাই সাজায় সেই ‘আস্থাভাজন’ ও তার সাগরেদরা। তদন্তে নেমে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রযুক্তিগত নজরদারি চালিয়ে ওয়াচ সেকশনের কর্মীরা শনাক্ত করেন সন্দেহজনক কিছু ব্যক্তিকে। এরপর কাজে লাগানো হয় কিছু সোর্সকে, যাদের তথ্যের ভিত্তিতে ওয়াচ সেকশনের একটি দল হানা দেয় নিউ ব্যারাকপুর থানা এলাকায়, যার ফলে গ্রেফতার হয়েছে দেবপ্রসাদ দাস ওরফে বাপি (৪৫), রাকেশ মজুমদার (৪৯), রাজু সাহা (৩৬), এবং তারক মুখার্জি (৫৮), এবং তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে সোনার বালা ও তিন হাজার টাকা। এরা যে ‘নোট ডবল’ চক্রের সদস্য, সেই চক্রের কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়েছে সারা রাজ্যেই। ধৃতদের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।