অন্য গ্রাম অন্য প্রাণের মানুষ কবি ও চিত্রকর পূর্ণেন্দু পত্রীর আজ প্রয়াণ দিবস

পূর্ণেন্দু পত্রী এক বহুমুখী প্রতিভা– চিত্রশিল্পী চলচ্চিত্র নির্দেশক কবি প্রাবন্ধিক আর চেতনায় বামপন্থার উদ্দাম স্রোত!

ছেঁড়া তমসুক জলে ভেসে যায়
তমাল সাহা

এক অদ্ভুত কবি ছিল আমাদের পাড়ায়। এক ঝাঁক মাথাভর্তি চুল ছিল। সাইড ব্যাগ ছিল তার কাঁধে। কলম তো ছিলই, তুলি ছিল, রং ছিল,ইজেল ছিল। আর কি ছিল? ক্যামেরাও ছিল।

আসল বস্তুটি তার কি ছিল! ওই যে বলে দৃষ্টি বা পর্যবেক্ষণ শক্তি প্রবল ছিল। মানে এই কবি, কবি তো ছিলই চিত্রকর ছিল, সিনেমাও বানিয়েছিল আর কি ছিল!
প্রাবন্ধিক ছিল গবেষক ছিল প্রচ্ছদকার ছিল মানে বইয়ের মলাটে ছবি আঁকতো, অক্ষর বসাতো। আড্ডাবাজ ছিল,রাজনৈতিক মনস্কতা ছিল আর কবিদের সঙ্গে জমাটি বেঠকী— সঙ্গে যা যা দরকার সবই ছিল।

এ কবি কথোপকথনে জাঁদরেল ছিল— সহজ সরল ভালবাসায় তারুণ্যকে উস্কে দিত। যেমন ধরো—

তোমার কপালে স্বেদবিন্দু কেন! আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি জানো!

আমিও তো সেই কখন থেকে…

তাই নাকি!

জ্যামে আটকে গেছি তোমাকে কতক্ষণে দেখবো বলে প্রতীক্ষা করছি। জ্যাম আর ছাড়ে না,জট আর খোলে না। যাক চলো একটু বসি। সন্ধে হয়ে আসছে। সময় বেশি নেই।

বরঞ্চ একটু হাঁটি’। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। চলো আউটরাম ঘাটের দিকে যাই।
তো কালকে মিছিল আছে! মিটিং হবে শহীদ মিনারে। ফেস্টুন ব্যানার কি করতে হবে বলো!

ওসব বাড়ি ফিরে গিয়ে রাতে বলে দেবো।

এখন তো দাঁড়াও। পড়ন্ত আলোয় তোমায় একটু দেখি।

আচ্ছা হলো তো!

নৌকোটা ছাড়বে বোধহয়! চলো না একটু ঘুরে আসি। নদী নৌকা মাঝি সঙ্গে তুমি আর আমি।

আমি যদি বলি আমি আর তুমি, আমাদের সঙ্গে মাঝি নৌকা নদী!

ঐ দেখো তারা ফুটছে। আমরা একটু ঘন হয়ে বসি।

এসব কথা কোত্থেকে উঠে আসে? মাঝি আনমনে গোধুলি আলোয় দেহতত্ত্বের গান গায়।
সেই কবির কথা মনে পড়ে! কবিতা পাঠের আসর বসিয়েছিল সিনেমায়।
কত রকম যে কবির প্রকার– দেখিয়েছিল সে!
জীর্ণ ছেঁড়া তমসুক জলে ভেসে যায়…