অবতক খবর,২১ মে: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় যশ। এই মূহুর্তে বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত এই ঘূর্ণিঝড় শক্তি সঞ্চয় করছে। হাওয়া অফিসের খবর অনুযায়ী আগামীকাল বিকেলের পরেই এই ঝড়ের গতিপ্রকৃতি স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। সম্ভবত উড়িষ্যার কটকে আছড়ে পড়বে এই ঘূর্ণিঝড় যশ। তবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে প্রচুর ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিই নয়, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় এই ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছে হাওয়া অফিস।

এই ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই সবরকম ব্যবস্থা সেরে ফেলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা টিম। তারা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যাবেন আগামীকালের মধ্যেই।
গতবছর ২০শে মে আম্ফান আছড়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গে। রীতিমতো ধ্বংসলীলা চলেছিল পশ্চিমবঙ্গে। সেই স্মৃতিচারণা করলে এখনো আঁতকে ওঠেন বঙ্গবাসী। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানি হয়েছিল।

বীজপুরেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল আম্ফানের কারণে। প্রায় ৩-৪ দিন বীজপুরে ছিলনা জল এবং বিদ্যুৎ। সেই সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বীজপুরের সমাজসেবী সুবোধ অধিকারী। আম্ফানে বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন থেকে শুরু করে ত্রিপল প্রদান, খাদ্য সামগ্রী প্রদান এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে মানুষের পাশে সবসময় ছিলেন তিনি।

এবার তিনি বীজপুরের বিধায়ক। আর বিধায়ক পদে আসীন হতে না হতেই তিনি বড় বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। গতবছর করোনাকালের শুরু থেকেই তিনি মানুষের সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন নিজেকে। আর বিধায়ক হতে না হতেই তিনি করোনা আক্রান্ত মানুষদের জন্য তৈরি করেছেন সেফ হোম।

আর এই করোনাকালের মধ্যেই আরো এক বিপর্যয় নেমে আসছে। আর কয়েক দিনের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় যশ। এটি একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। সুতরাং এর কতটা প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গ তথা বীজপুরে তা এই মুহূর্তে কেউই বলতে পারবে না। সুতরাং সকলকেই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

আর সেই কথা মাথায় রেখেই আজ হালিশহর লোকসংস্কৃতি ভবনে বীজপুর পুলিশ প্রশাসন, দমকল বাহিনী,বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, বিদ্যুৎ বিভাগ, কাঁচরাপাড়া পৌরসভার পৌর প্রশাসক সুদামা রায় ও অন্যান্য সদস্য এবং হালিশহর পৌরসভার পৌর প্রশাসক রাজু সাহানী সহ অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে এক জরুরী ভিত্তিতে বৈঠক করেন বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী।

তিনি বলেন,গতবছর আম্ফানে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে বীজপুর। সেই সময় রাজনীতি ভুলে আমরা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছিলাম। এবারো আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ঝড় থেমে যাবার পরেই আমাদের নেমে পড়তে হবে ময়দানে। ‌ আমি নিজে ২৪ ঘন্টা মানুষের পরিষেবা দিতে প্রস্তুত থাকবো। মানুষের সকল সুবিধা অসুবিধা দেখতে হবে। বিশেষ করে জল সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। ঝড়ের পরে যেন মানুষ দ্রুত বিদ্যুৎ এবং জল পায় সেই দিকে নজর দিতে হবে দুই পৌরসভাকে।
পৌর কর্মীরা তো বটেই,দলের প্রত্যেককে দ্রুত লেগে পড়তে হবে কাজে। টিম করে করে গোটা বীজপুরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে হবে দলের কর্মীদের। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কোন দল, রং, ধর্ম কিছু না দেখে মানুষের সাহায্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

বিধায়ক সুবোধ অধিকারী বলেন,বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে যে সমস্ত পিছিয়ে পড়া অঞ্চল এবং ভাগীরথীর উপকূল সংলগ্ন অঞ্চল রয়েছে,সেই সমস্ত এলাকায় আগামীকাল থেকেই যশ ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সচেতনতামূলক বার্তা মাইকিং করে মানুষকে জানানোর কাজ শুরু হবে। এর পাশাপাশি দুঃস্থ এবং কাঁচা বা অপরিপক্ক বাড়ির মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তাদের শুকনো খাবার এবং জল সরবরাহ করা হবে। এর পাশাপাশি এমার্জেন্সি ওষুধপত্রের ব্যবস্থাও থাকছে। ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে দুই পৌরসভার হেল্পলাইন নম্বর। এছাড়াও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে দলীয় কর্মী এবং অন্যান্যদের নম্বর,যাতে মানুষ সহজেই সাহায্য পেতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলরদের নম্বর দেওয়া হবে। তারাও এই বিপর্যয় মোকাবিলায় তৎপর থাকবেন।

বিধায়ক দুই পৌরসভাকে নির্দেশ দেন,বীজপুর নিকাশি ব্যবস্থা অর্থাৎ সমস্ত ড্রেন যাতে পরিষ্কার থাকে, দুর্যোগের কারণে যাতে নালাগুলি উপচে জল রাস্তায় না আসে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগকেও তৎপর থাকতে বলেছেন তিনি।

সবশেষে তিনি বীজপু্রবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা অযথা ভয় পাবেন না। নিরাপদ আশ্রয়ে থাকুন। যেকোনো সমস্যায় পৌরসভায় অথবা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন,দ্রুত আপনাদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে। এই বিপর্যয়কালে আপনাদের সেবায় ২৪ ঘন্টা নিয়োজিত থাকবো আমরা‌। সুতরাং ভয় পাবেন না। আর এই দুর্যোগের সময়েও করোনা বিধি মেনে চলুন। আমরা আছি আপনাদের পাশে।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে,যশ মোকাবিলায় প্রস্তুত বীজপুর বিধায়ক সুবোধ অধিকারী,নগর প্রশাসন,থানা প্রশাসন,দমকল বিভাগ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র।