বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর, বারাকপুর :: বারাকপুর বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার। আর এই গোষ্ঠী কোন্দলের সুযোগ নিয়ে একের পর এক দল ভাঙন  ধরিয়ে চলেছে তৃণমূল।  বিজেপির গোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে পার্থ ভৌমিক অধিকারীরা বিজেপি নেতাদের তৃণমূলে ফিরিয়ে আনছেন বারাকপুর বিজেপি অবস্থা এমন যে গত ছয় মাসের মধ্যে বিজেপি প্রায় সবকটি পুরসভা তাদের দখলে আনতে পারলেও ৬ মাস কাটতে না কাটতে সবকটি পৌরসভা বেহাত হয়ে গেছে। এইসবের জন্য বিজেপির ভেতরে অন্তর্কলহ দায়ী করা হচ্ছে । সোজা কথায় বিজেপি কর্মীরা জেলা নেত্রী ফাল্গুনী পাত্রকে দায়ী করছেন।

বিজেপির জেলার সক্রিয় কর্মীদের দাবি যে বারাকপুর  বিজেপি শক্তি অর্জন করেছে অর্জুন এর দলে আসার পর আর দলের অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর অবক্ষয় হয়েছে অর্জুনের জন্যই।

পুরনো বিজেপি কর্মীদের দাবি ফাল্গুনী পাত্রকে জেলা সভাপতি করে বিজেপি বেশ ভালোই উত্থান করেছে তারা, তার কারণ দলে এসে অর্জুন ফাল্গুনী মুকুল সকলে মিলে মিশে কাজ করেছিলেন। কিন্তু এখন অর্জুন তার উপরে বসে থাকা জেলা নেত্রীকে মেনে নিতে পারছেন না, তাই তার আলাদা গোষ্ঠী তৈরি করে জেলা নেতৃত্বকে সুযোগ পেলেই হেনস্থা করা হচ্ছে।

তবে অন্যদিকে ফাল্গুনী বিরোধী গোষ্ঠীর দাবি, প্রথম থেকেই ফাল্গুনী পাত্র অর্জুনকে সহ্য করতে পারছিলেন না। তাদের অভিযোগ ফাল্গুনী দেবী অর্জুনকে নির্বাচনে হারানোর জন্য চেষ্টা করেছেন এই অভিযোগ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হয়েছে।

তাদের আরও অভিযোগ ফাল্গুনী দেবী তার পছন্দের লোকেদের বেছে বেছে মন্ডল সভাপতি করেছেন।এক প্রাক্তন সভাপতি জানান যে, ফাল্গুনী পাত্র তার বাড়িতে পিকনিকে ডেকে কোন কাজের ভিত্তিতে না গিয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে মন্ডল সভাপতির নাম ঘোষণা করে দেন, তার জন্য তার বাড়িতে বিক্ষোভ ভাঙচুর চালান পুরনো কর্মীরা।

বিজেপি পুরনো কর্মীদের দাবি, বেশি সংখ্যক তার পছন্দের মানুষকে পদে বসানোর জন্য একুশটি মন্ডল কমিটি ভেঙে সাতাশটি মন্ডল তৈরি করেছেন ফাল্গুনী দেবী।

নৈহাটিতে ফাল্গুনী দেবীর সঙ্গে অর্জুন পন্থী মনোজ সিং ও গণেশ দাস গ্রুপের লড়াই সকলের জানা। ফাল্গুনী বিরোধীদের দাবি লবিবাজি  করতে গিয়েই ফাল্গুনী দেবী দলকে ডুবিয়ে দিয়েছেন, গুন্ডা-বদমাশদের  বিজেপিতে যোগদান করিয়ে টাকা নিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় বিজেপি কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, সেই ফাল্গুনীর হাত ধরে বিজেপি তে যোগদানকারী গুন্ডা-বদমাশরা। দলকে সংগঠিত করার বদলে তিনি দলের সক্রিয় কর্মীদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করার জন্য মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এক বিজেপি নেতার দাবি, যাদেরকে ফাল্গুনী দেবী দলে এনে বিজেপি কর্মীদের মারধর করেছেন সেই গুণ্ডারা দলের  বারোটা বাজিয়ে ফের তৃণমূলের  ফিরে গেছে, এখনো তারা বিজেপির উপরে আক্রমণ চালাচ্ছে।

নৈহাটি পাশাপাশি কাঁচরাপাড়া মন্ডলকে  দুভাগ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। আইন না মেনে তার ইচ্ছেমতো মন্ডল সভাপতি করেছেন। অভিযোগ  কাঁচরাপাড়া মন্ডল ১ পদে যাকে বসিয়েছেন সে একজন চাকরিজীবী মানুষ। দলের জন্য সবসময়, সময় দেওয়ার তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন একজনকে মন্ডল সভাপতি ঘোষণা করে দিয়েছেন শুধুমাত্র তার ভক্ত বলে। প্রাক্তনীদের দাবি, তাপস ঘোষ ,যাকে তিনি মন্ডল সভাপতি করেছেন সে মাত্র 6 মাস আগেই দলে যোগদান করেছে। তার দলের ভেতরে গ্রহণযোগ্যতা নেই, কিন্তু তাকে মাথায় বসিয়ে দিয়েছেন তিনি যা ভালো করে নিচ্ছেন না সাধারন বিজেপি কর্মীরা।

অন্যদিকে নোয়াপাড়া বিজেপি সক্রিয় কর্মীদের দাবি যে নির্বাচনী খরচের যে টাকা পয়সা এসেছিল সে সব না দিয়ে নয়ছয় করেছেন ফাল্গুনী। এক মন্ডল সভাপতি জানান তাদের প্রচুর টাকা ফাল্গুনী দেবী এখনো পর্যন্ত দেননি। টাকা চাইলে এদিক সেদিক কথা বলে পাশ কাটিয়ে যান। তিনি জানান এই নেত্রীর বিদায় হলে দলের ভালই হবে।

অন্যদিকে ফাল্গুনী পাত্র পন্থীদের দাবি সাংসদ তার মাথায় কাউকে থাকতে দিতে চান না ,তাই ফাল্গুনী পাত্রকে সরিয়ে তার পছন্দের লোককে জেলা সভাপতি পদে আনতে চান। তাই কারণ অকারণে জেলা নেত্রীর বিরুদ্ধে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ করা হচ্ছে। তাদের দাবি জেলা যদি বিজেপির অবস্থা খারাপ হওয়ার জন্য সাংসদই দায়ী। তিনি তার লোকেদের আলাদা গোষ্ঠী তৈরি করেছেন, আর গন্ডগোল বাড়াচ্ছেন ।

বিজেপির দু’পক্ষই এক অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করে চলেছে। তবে একটা কথা ঠিক যে বর্তমানে ফাল্গুনী দেবীর বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই তাদের অভিযোগ কে গুরুত্ব দিয়েই রাজ্যের 38 জন বিজেপি জেলা সভাপতির মধ্যে 37 জনের নাম বিজেপির ঘোষণা করলেও ব্যারাকপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতির নাম আটকে দেয় বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। সোজা কথা বলতে গেলে ফাল্গুনের দেবী জেলা নেত্রী হিসেবে আর দু’চারদিনের মধ্যেই বিদায় নিতে চলেছেন। আর তার জায়গায় নতুন সভাপতি আসতে চলেছেন সেটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে।