অবতক খবর,২৩ মে: বীজপুরের মানুষ দীর্ঘ এক বছর ধরে লড়াই করছেন করোনার সাথে। গতবছরও করোনাকালে মানুষকে সম্মুখীন হতে হয়েছিল আম্ফানের মত ঘূর্ণিঝড়ের। যারফলে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল মানুষের জনজীবন। আর এই বছরও ঠিক একই সময়ে এই করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় যশ।

কিন্তু এত কিছুর পরেও দেখা নেই বীজপুরের দুবারের তৃণমূল বিধায়ক এবং এবছর বীজপুর বিধানসভা নির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী শুভ্রাংশু রায়ের। এই বিপর্যয়কালে শুভ্রাংশু রায় এবং তাঁর দলের কর্মীরা নিখোঁজ।

বিজেপি দলের বহু কর্মীদের এই করোনা পরিস্থিতিতে এবং লকডাউনে অবস্থা শোচনীয়। কারণ নির্বাচনের আগে তারা যেভাবে তাদের কাজকর্ম বাদ দিয়ে বিজেপি প্রার্থী শুভ্রাংশু রায়কে জেতানোর জন্য পরিশ্রম করেছেন,তাতে তারা আর্থিকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। ভোট পর্যন্ত তারা মিছিল, মিটিং করেছেন। ভোট শেষ হতেই তারা এই চিন্তায় মগ্ন ছিলেন যে,কে জিতবে! আর ভোটের ফলাফল ঘোষণা হতেই শুরু হয়ে গেল লকডাউন। যার জেরে তাদের আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এদিকে কর্মীদের সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ নেই শুভ্রাংশু রায়ের।

এ প্রসঙ্গে বেশিরভাগ কর্মীরা হতাশ হয়ে বলছেন যে, “আমরা বীজপুর বিধানসভায় জয়ী না হতে পারলেও, প্রচুর ভোট পেয়েছি আমরা। আমরা ছিলাম দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু সিপিএম অতি অল্প ভোট এবং তৃতীয় স্থানে থাকা সত্ত্বেও এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে রয়েছে। সিপিএম যদি করতে পারে তবে আমরা কেন পারছি না? শুধু তাই নয়, আমরা কোন কাজই করতে পারছি না। ঘরে বসে রয়েছি আমরা। আমরা কি আগের মতো আর ময়দানে নামব না? রাজনীতি ভুলে এখনই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সবথেকে বেশি প্রয়োজন। কিন্তু আমরা তা করতে পারছি না। কারণ যার জন্য আমরা লড়াই দিয়েছিলাম,তিনিই ময়দানে নেই। শুধু তাই নয়, তিনি হয়তো এখন রাজনীতিতেও নেই।

ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরপরই তাঁর বাগমোড়ের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান অক্টেভের সামনে বড় বড় হরফে লেখা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তার একটি পোস্টার লাগানো রয়েছে। এই পোস্টারের কারণেই কিছুদিন আগে বীজপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তথা মানুষের মধ্যে বিভিন্ন গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। সেই গুঞ্জন কোন বিষয়ে ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।‌তাহলে এখন আমাদের পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন তো! তিনি তো নিজেকে ঘরের ছেলে বলে ঘোষণা করেছিলেন, আর এই কঠিন পরিস্থিতিতে ঘরের ছেলেই সবার প্রথমে নিখোঁজ হয়ে গেলেন। ঘরের ছেলে,উন্নয়নের কান্ডারী বলে বলে তারস্বরে চেঁচানো মানুষটি কোথায় গেলেন? তিনি প্রথম থেকেই মিথ্যাচারিতা করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই তিনি উন্নয়নের কান্ডারী হয়েছিলেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঘরের ছেলে ঘরে ঢুকে পড়েছেন। তাহলে বুঝুন অবস্থা! তিনি মানুষের জন্য নয়, নিজের জন্য রাজনীতি করেছেন,নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে রাজনীতি করেছেন। আমরা তাঁকে বারবার আহ্বান জানিয়েছি যে,ময়দানে নেমে এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের কাজে লাগুন, রাজনীতির রং ভুলে মানুষের জন্য কাজ করুন। কিন্তু না, তিনি আমাদের পাশেও দাঁড়ান নি, তিনি মানুষের জন্য কাজও করছেন না। অন্যদিকে আমাদের বিধায়ককে দেখুন। বিধায়ক হবার আগে থেকেই তার কর্মকাণ্ড ছিল চোখে পড়ার মত। আর বিধায়ক হওয়ার পর তিনি রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতিতে পিছুপা না হয়ে প্রতি মুহূর্তে লেগে রয়েছেন মানুষের সেবায়। মানুষের স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে মানুষের মুখে অন্ন যোগানো,সেফ হোম তৈরি,যশ মোকাবিলায় তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু কোথায় ঘরের ছেলে? ঘরের ছেলে কি শুধু ভোটের আগেই মানুষের সেবা করবেন? আর হেরে গেছেন বলে কোন মানুষ এমনকি নিজের দলের কর্মীদেরও খোঁজ রাখবেন না? এ কেমন নেতা? তবে কার জন্য,কাকে জেতানোর জন্য আমরা সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে এতদিন লড়াই করলাম? তবে কি তিনি শুধুই নিজের পকেটে ভরার জন্য রাজনীতি করলেন?”

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি দলের কর্মীরাই এইসকল প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।