অবতক খবর,৩ জানুয়ারি: দিল্লির বুকে চলছে ঐতিহাসিক কৃষক বিদ্রোহ। ভারতবর্ষের রাজধানী দিল্লির ৫টি সীমান্তে লক্ষ‌ লক্ষ কিষান-কিষানি পরিবারসহ অবস্থান করছেন। তাদের রুখতে তৈরি আছে টিয়ার গ্যাস বাহিনী,জলকামান বাহিনী। তাছাড়া তো রয়েছে ব্যারিকেড, লোহার কন্টেইনার এবং দিল্লিতে ঢোকার পাঁচটি সড়ক তিন ফুট করে বিভিন্ন স্থানে খুঁড়ে দেওয়া হয়েছে যাতে ট্রাক্টর নিয়ে কৃষক বাহিনী দিল্লিতে প্রবেশ করতে না পারে।

দিল্লিতে এখন কনকনে ঠান্ডা। ‌ কোথাও ০° কোথাও ২° কোথাও ৫°। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে এবং রাষ্ট্রীয় শক্তির সঙ্গে দুটির প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চোয়াল শক্ত করে লড়ছে দেশের কৃষকরা। এই কৃষকদের মধ্যে বিশেষত রয়েছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, মহারাষ্ট্রের কৃষকেরা।

৫০০টি কৃষক সংগঠন সম্মিলিতভাবে যৌথ সংগঠন গড়ে এই মহাবিদ্রোহ গড়ে তুলেছে। আজ তার ৩৯ দিন। আজ পর্যন্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে অর্থাৎ এই শৈত্যপ্রবাহের আক্রমণে মারা গিয়েছেন ৪৭ জন কিষান এবং ৪ জন কৃষকদের স্বার্থে আত্মহনন করেছেন। এই আত্মহত্যা শহীদের মৃত্যুবরণ। কারণ এই মৃত্যুর জন্য রাষ্ট্রই দায়ী।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এই আন্দোলন আরো দুর্বার, দুর্জয় হয়ে উঠবে বলে ধারণা। কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কৃষক নেতাদের ইতিমধ্যে কয়েকটি আলোচনা হয়ে গেছে। কোন আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি এবং আগামীকাল ৪ জানুয়ারি শেষ পর্যায়ের আলোচনা হবে। নেতৃবর্গ মনে করছেন আগামীকালের আলোচনাও ফলপ্রসূ হবে না। ফলত,লড়াইকে আরো জোরদার এবং হিম্মতদারি পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, তার জন্য পরিকল্পনা রচনা করেছেন সংগঠকরা।

এর পরে বিভিন্ন রাজ্যে যারা এই আন্দোলনে দিল্লিতে গিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না, তাদেরও জড়িয়ে নেবার জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে কৃষকরা কর্মসূচি নিয়েছে। অবস্থান আন্দোলনের আয়োজন করেছে এবং এর পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা যারা দিল্লিতে উপস্থিত হতে পারছেন না তারা তাদের রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের যে প্রতিনিধি রাজ্যপাল তাঁর বাসস্থান রাজভবন ঘেরাও করবেন। সেই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আরও জানা গেছে,২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের আন্দোলন চলবে।

২৬ জানুয়ারি আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত আসন্ন। ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস। এইদিন রাষ্ট্রীয় কুচকাওয়াজ দিল্লির পথে হবে। এই কুচকাওয়াজ শেষ হওয়ার পর কৃষক আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি তারা প্রায় এক লক্ষ ট্রাক্টরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে দিল্লির রাজপথে প্যারেড করবেন। অর্থাৎ সমগ্ৰ বিশ্বের ইতিহাসে ভারতবর্ষের যে কৃষক আন্দোলন,তার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত আসন্ন। এই সমস্তই আজ বিশদভাবে বক্তব্যে রেখেছেন সংগঠকদের অন্যতম পশ্চিমবঙ্গের কৃষক নেতা হান্নান মোল্লা।

তিনি উল্লেখযোগ্য ভাবে একটি কথা বলেন। যেহেতু এটি ছিল শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনে সভা, তিনি বলেন, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিকও বিকিয়ে যায় তাদেরও কেনাবেচা চলে। কিন্তু পৃথিবীর একমাত্র শক্তি কিষান শক্তি যাদের কেনা যায় না। তারা কারো গোলাম নয়। তিনি এর কারণ স্বরূপ বলেন, কৃষকদের সঙ্গে মাটির সম্পর্ক। কৃষকদের সঙ্গে দেশমাতার সম্পর্ক। দেশমাতা মাটি দিয়ে গড়া। সুতরাং এই মাটির মানুষদের কোনদিন কেনা যায় না, কেনা যাবে না। এরা দেশের মাটির সঙ্গে গদ্দারি করে না। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বহু পন্ডিত মানুষ আছেন। সেখানে আয়া রাম গয়া রামের খেলা চলে। তাদের কেনা বেচা যায় বিদ্বজ্জন বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত হলেও তারাও বিক্রিত হয়ে যান, কিন্তু এই মাটির সন্তান মাটির কৃষকদের কেনা যায় না, কেনা যাবেও না। তিনি বলেন যে, আলোচনা চলছে, তাতে যে কৃষক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকছেন তাদের মধ্যে কোন দ্বিধা দ্বন্দ্ব এবং দ্বিমত পোষণ করার জায়গা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হলে এতদিনে এই আন্দোলন ভেঙে যেত রাজনৈতিক মতদ্বৈধতার কারণে। কারণ এটি পেটের দানাপানির প্রশ্ন।এই আন্দোলনটি ঐতিহাসিক এই কারণে যে এটি শুধুমাত্র কৃষক সম্প্রদায়ের আন্দোলন নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষের পেট এর সঙ্গে জড়িত। সুতরাং এই আন্দোলন সাফল্যমন্ডিত হবেই। কারণ কৃষকদের যে জেদ,যে হিম্মত, যে লড়াইয়ের ক্ষমতা সেটা অন্য কোন শ্রেণীর নেই।