কাটোয়া মুলটি গ্ৰাম,মঙ্গলবার,৩১ মে বোমা ব্যবসায়ী মকবুল শেখকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার শৌচালয়ের ছাদে ছটি বোমা পাওয়া গিয়েছে। সে বোমা-গুলি রোদে শুকোতে দিয়েছিল।

অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ

সওয়াল জবাব
তমাল সাহা

হে ধর্মাবতার
কি জানতে চান বলুন? পদ্যে বলব না গদ্যে বলব?
দেশে ধার্মিকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। রামায়ণ মহাভারতের ছন্দেও বলতে পারি। সেখানে বোমার কথা নেই, অস্ত্রশস্ত্রের কথা আছে। তীর ধনুক গদা এইসব। তখন তো বোমা ছিল না।

না, আপনি গদ্যে বলুন।
আপনার বাড়িতে বোমা পাওয়া গিয়েছে, আপনি বোমার ব্যবসা করেন?

হ্যাঁ,করি। এটা আমার পূর্ব পুরুষের পেশা। আমি উত্তরাধিকার সূত্রে এটি পেয়েছি, তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছি।

বিচারক হতবাক। কি বলতে চান?

ন্যায়াধীশ মাপ করবেন। আপনি দেখছি কিছুই জানেন না। আপনি হেমচন্দ্র কানুনগোর নাম শোনেননি দেখছি? তিনি বিদেশ থেকে বোমা বানানোর পদ্ধতি শিখে এসেছিলেন।
আলিপুর বোমা মামলা বা মুরারিপুকুর বোমা মামলা বলে, তার কথা জানেন না? অরবিন্দ ঘোষ, বারীন ঘোষের নাম শুনেছেন? এরা সব বোমা মামলায় ফেঁসে গিয়েছিলেন। ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাশের নামও কি শুনেছেন? তিনি অভিযুক্তদের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, লড়েছিলেন। তারাই আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, এখন অনুপ্রেরণায় বাঘের বাচ্চা হয়। মানুষের মত মানুষের বাচ্চা হয় না।
কিন্তু তাদের অনুপ্রেরণায় আমি বোমারু হয়েছি। আমার বাড়ির পাশ দিয়ে ভাগীরথী নদী বয়ে যায়।

হালিশহর শিবের গলির নাম শুনেছেন? সেখানে থাকতেন
বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী। তিনি তারকাটা বাগানে বোমা বানাতেন, বোমা বানানোর কৌশল শেখাতেন। রডা কোম্পানির মাউজার পিস্তল লুট করে গাঙ্গেয় প্রদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমি তো অতদূর পর্যন্ত যাইনি অর্থাৎ পিস্তল পর্যন্ত যাইনি। শুধু বোমাই বানিয়েছি। আর ক্ষুদিরাম তো সোজাসুজি বোমা মারলেন কিংসফোর্ডের গাড়িতে। ভগৎ সিং পার্লামেন্ট মানে আইনসভাতেই বোমার বিস্ফোরণ ঘটালেন। আপনি তো নিশ্চিত এসব জানেন।

আমি আপনাকে সওয়াল করতে চাই।

আমাকে সওয়াল! মানে?

আপনি জবাব দিন। ওই স্বাধীনতাকামী লড়াকু মানুষদের এই বোমা বানানোতে কোন দোষ হয়েছিল কি? তাদের জন্মদিন মৃত্যুদিন আমরা পালন করি। তারা মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। আপনি কি তাদের শ্রদ্ধা জানান?
হে মহামান্য, চুপ থাকবেন না। দ্রুত জবাব দিন।

হ্যাঁ, আপনার কথা খুবই সত্যি। তারা দেশের মুক্তির জন্য লড়েছিলেন। আপনি স্বাধীন দেশে বোমার ব্যবসা করছেন। সংবিধান অনুযায়ী আপনি দোষী।

মান্যবর মাপ করবেন। আমাদের তো পেটের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। এদেশে কাম কাজ কোথায়? আমাকেও পেটের জন্য পেটো বানাতে হচ্ছে। পেটে খেয়ে বউ-ছেলেপুলে নিয়ে নিজে বাঁচলে তো মানুষের জন্য লড়াই! দেশে এতো রাজনৈতিক দল। তারা সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চায়। তাদের সাহায্য করে রাজনীতির মস্তানরা। তাদের পেটো চাই।

আপনি কি নজর করেছেন পেটের সঙ্গে পেটো উচ্চারণের একটা স্বাভাবিকতা আছে। তাই আমি পেটো বা বোমা বানাই। এখন পেটোর খুব চাহিদা। তাই এই পেশাকে নিজের জীবনের বেঁচেবর্তে থাকার পেশা হিসেবে নিয়েছি। আমি তো গ্রেপ্তার হতে চাই। আজীবন জেল খাটতে চাই।

মানে, কি বলতে চাইছেন?

ধর্মাবতার!
এই যে আমি সুতলি বোমা ২৫০ টাকায় বিক্রি করি, কৌটো বোমা ৪৫০ টাকায় বিক্রি করি, সকেট বোমা বারোশো টাকায় বিক্রি করি। এসব আর আমার বিক্রি করতে হবে না।
কারণ আমৃত্যু জেল খাটলে সে খারাপ ভালো যাই হোক পেটের দানাপানির তো সরকারি সংস্থান হবে। ফলত এ ব্যবসা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে।

আজকের আদালতের কাজ মুলতুবি হয়ে গেল।
পরের শুনানি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের দিন। সেদিন সূর্য সেন ও প্রীতিলতাকে বোমা বানানোর বিষয় সম্পর্কে জেরা করা হবে।