সাঁকরাইল ভাণ্ডারিতলাঃঘটনা ১৭ জুন,২০২২

অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদন-

অন্য অগ্নিপথঃ
শহিদুল সোহরাবদের কাঁধে বৃদ্ধ পড়শি সন্তোষ চাচা

অবতক খবর,১৮ জুনঃ
আরে ছাড়ুন তো পয়গম্বর! নবী! এই শব্দ দুটোর আসলি মানে জানেন?

জাতীয় সড়কে অবরোধ চলেছে। টায়ার জ্বালিয়ে আগুন জ্বলেছে। দোকানপাটও ভাঙচুর হয়েছে। পেটের দানা পানির সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। এসব ভাবতে হবে।
পুলিশ দেরিতে ঘটনা সামাল দিয়েছে। বড় মাপের পুলিশ আধা সেনাবাহিনী ভারী বুটের শব্দ তুলছে এখনো পাড়ায়, রাস্তায়। ‌১৪৪ ধারা জারি, সবই সত্যি।

শহিদুল,ফিরোজ,মোস্তাক আলিরা বলে উঠলো, সবই সত্যি। তার চেয়েও বড় সত্যি আছে। সেটাই হচ্ছে আসল সত্যি। আসল সত্যি হলো মানুষ, মানুষের স্কন্ধা, কাঁধ।

গ্রামের নাম ভাণ্ডারীতলা, সাক‌রাইল। সবাই বলে এটা মুসলমানদের পাড়া। এই পাড়ার বুড়ো পড়শি সন্তোষ চাচা। সন্তোষ কর্মকার। মারা গেছেন। তার ইন্তেকাল হয়েছে শ্বাসকষ্টে। সন্তোষ চাচার ছেলে মাধব চুপচাপ বসে আছে বাপের মড়া নিয়ে। বাড়িতে সোজা ঢুকে গেল শহিদুল, হাসানুলেরা। আরে চুপচাপ কেন, আমরা তো আছি। তোর সঙ্গে একসঙ্গে খেলাধুলো করেছি। যেই কথা সেই কাজ। তারা নিজেদের বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে আনল। শবদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার খাটিয়া বানালো। দশকর্মা ভাণ্ডার থেকে কিনে আনল হিন্দু মতে সব জিনিস। গীতা নামাবলী অগুরু গন্ধি চন্দন কাঠ থান কাপড় যা যা লাগে সব কিছু।

আর ফতিমা বিবি মুসলিমমারা তারা সন্তোষ চাচার স্ত্রীর পাশে এসে বসে পড়লেন। তার গায়ে হাত বুলিয়ে নানা রকম ভাবে তাকে সান্ত্বনা দিলেন,আর কি করলেন? মুসলিম সমস্ত সংস্কার ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মাধবের মায়ের সিঁথিতে শেষ সিঁদুর আর পায়ে আলতা পরিয়ে দিলেন। শাঁখা ভাঙার মতো শোকাবহ- হৃদয়বিদারক কাজটিও করলেন রোশেনারা বিবিরা।

হরি বোল ধ্বনি উঠল।শহিদুল সোহরাবদের মুসলমানদের কাঁধে চড়ে হিন্দু সন্তোষ চাচা চলে গেল অন্য এক মহান অগ্নিপথের দিকে।

এই এই দৃশ্য দেখতে মন্দির মসজিদের মাথায় চাঁদ উঠল। সন্ধ্যা-আরতির ঘন্টা বেজে উঠল মন্দিরে আর মসজিদ থেকে সান্ধ্য নামাজের ধ্বনিময় আওয়াজ নিয়ে বাতাস ছুটতে লাগলো…