১৩ মার্চ,১৯১৪
কবি-সাংবাদিক সরোজ দত্ত জন্মেছিলেন। ভারতীয় রাজনীতিতে তামাম ভারতবর্ষ তোলপাড় করে তুলেছিলেন তিনি। নিশ্চিত বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। রাষ্ট্রীয় জল্লাদেরা তাকে হত্যা করেছিল। হত্যার আগে তার কথোপকথন আসুন একটু শুনি।
হত্যার আগে কথোপকথন
তমাল সাহা
কবি সোজাসুজি বললেন,
পুলিশ তো রাষ্ট্রীয় বাহিনী।
সে তো আইনসিদ্ধ এবং
গণতান্ত্রিক দেশের নিরাপত্তা বলয়।
পুলিশের কার্যকলাপ তো গোপনীয় নয়,
তবে এত রাতে কেন?
এতদিন জানতুম বিপ্লবীরা রাতের অন্ধকারে গোপনে বিচরণ করে।
পুলিশ কি তবে এ দেশে নতুন ধারার বিপ্লবী?
কবি বললেন,
কালো গাড়ি দেখেছি। জালে ঘেরা।
এর আগে কালো গাড়িতে উঠেছিও কয়েকবার। কবিদের আবার ক-বর্ণটির উপর খুবই প্রলোভন।
ক-এ কলম, ক-এ কাগজ, ক-এ কবিতা।
ক-এ কয়েদ এবং শেষ পর্যন্ত ক-এ কার্তুজ।
কলম যদি কবির অস্ত্র হয় তবে
কার্তুজও বিরোধী পক্ষের অস্ত্র।
এটা আমি চিরকালই মানি।
কবি আরও বললেন,
কলম দিয়ে কালি,কথা বেরোয়।
সেই কালিতে জলীয় ভাব থাকলেও
তাতে লুকিয়ে থাকে অদৃশ্য আগুন—
তা মানুষের পক্ষে স্পর্ধিত বর্ণমালা।
কার্তুজ দিয়েও আগুন বেরোয়।
শব্দও ছুটে যায় তবে সে শব্দ সীমিত নির্দিষ্ট।
তার মাত্র একটিই উচ্চারণ— গুড়ুম!
তা তো হত্যার লীলাখেলা।
কবি বললেন,
আমি ম-বর্ণটিও ভীষণ ভালোবাসি।
ম-এ মানুষ, মিছিল, ময়দান, মুক্তি।
এবার ফায়ারিং স্কোয়াডের মাতব্বর মুখ খুললেন। বললেন,
আপনাকে তো ময়দানেই নিয়ে যাচ্ছি।
বলুন তো, ম দিয়ে পৃথিবীর শেষ বর্ণটি কী?
তারপর পৃথিবীর আর কোনো বর্ণমালা
উচ্চারণ করা যায় না।
কবি সহজ, স্বাভাবিক উচ্চারণে বললেন, মৃত্যু।
সঙ্গে সঙ্গে তিনটি কার্তুজ…
একটি কপাল, দ্বিতীয়টি কন্ঠ, তৃতীয়টি বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে গেল।
গুড়ুম্! গুড়ুম! গুড়ুম!
কবি বলেছিলেন,
এই মাটি, এই মৃত্তিকা আমাদের।
কবি পৃথিবী ছাড়লেন না—
মাটিতেই পড়ে রইলেন।
কবি বললেন,
আমি গর্বিত। অহঙ্কারী।
কলকাতার ব্রিগেড ময়দান আমার বধ্যভূমি।
তার মস্তিষ্কের চিন্তা যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে
তার মাথাটি কেটে নিয়ে গেল রাষ্ট্রীয় জল্লাদেরা।
তখনও আকাশে জ্বলজ্বল করছে ভোরের শুকতারা।
( উল্লেখ্য মহানায়ক উত্তমকুমার প্রাতঃ ভ্রমণে বেরিয়ে ময়দানে রাষ্ট্রের দ্বারা সংঘটিত এই হত্যাদৃশ্য দেখেছিলেন এবং অভিনেতা কালী বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলেন। তিনি এতই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে দু’মাস কালের জন্য বোম্বাই চলে যান।পরে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের পুলিশি চাপের মুখেও পড়েন। জানিয়ে দেন,’ আমি কিছুই দেখিনি’। )