অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ

আজ গান্ধীজির ১৫২ তম জন্মবর্ষ: ভারতবর্ষের জলবায়ুতে জন্মানো গান্ধীজির উপকারিতা-অপকারিতার কথা শুনুন।

গান্ধীজিঃ উপকারিতা-অপকারিতা

গান্ধীজি শালা!বাজে লোক।
তাঁর জন্যই আজ দেশের এই অবস্থা।
ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি এই কথা।
দেশের ভালো লোক কারা,
একথা এখনও শুনিনি কারো কাছ থেকে।
গান্ধীজি যদি দেশের খারাপ করে থাকেন
তবে যে দেশে এত কোটি কোটি লোক তারা একটা গান্ধীকে সামাল দিতে পারল না?
তারা এত গান্ডু ছিল!
তখন আমার এমন মনে হয়েছিল।
তবে গান্ডু শব্দটা অশালীন মনে হওয়ায় আমি তা প্রকাশ্যে বলিনি,
এখনও বলছি না।

এই দুনিয়ায় আদি অকৃত্রিম চেহারা ছিল গান্ধীজির।
হাঁটুর উপর কৌপিন করে পরা ধুতি,
চোখে নিকেলের ফ্রেমে গোল চশমা,হাতে একটা লাঠি,
গাল ভাঙা মুখ অথচ লম্বমান দেহ,
পায়ে চটি—
এই হল আমাদের গান্ধী,বিশ্ব যাকে চেনে।

গান্ধীজি খারাপ
কারণ চৌরিচোরা থানায় আগুন লাগিয়ে বাইশজন পুলিশকে পুড়িয়ে মেরেছিল জনতা।
হিংসা! অহিংস গান্ধীজি এর প্রতিবাদে অসহযোগ আন্দোলন তুলে নিয়েছিলেন। ভগৎ সিং এর ফাঁসি রদ করতে পারতেন গান্ধীজি, করেননি।
তিনি বাঙালি সুভাষচন্দ্রের চেয়ে নাকি কাশ্মীরি জহরলালকে বেশি ভালোবাসতেন।

গান্ধীজি খারাপ—
কারণ তিনি ছাগলের খাঁটি দুধ খেতেন,
দুটি মহিলা তাঁর নিত্য চলার সঙ্গী ছিল।
রবীন্দ্রনাথও খারাপ,বৌদির সঙ্গে তার প্রেম-আত্মহত‍্যার কাহিনী পড়তে খারাপ নয়
আর মাও- সে-তুং-এর তো কথাই নেই, তার মতো মানুষ
লাস‍্যময়ীকে বিয়ে করেছেন!
আমরা এসব শুনতে খুবই ভালোবাসি এবং ভালোও লাগে।

গান্ধীজি যেন চম্পারনে,খেদা জেলাতে কৃষক আন্দোলনে এ যোগ দেন নি?
গান্ধীজি যেন আমেদাবাদ সুতাকল শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান নি?
গান্ধীজি যেন কোনোদিনও জেলের ঘানি টানেন নি? দাঙ্গাবিধ্বস্ত নোয়াখালি
সফর করেছিলেন তিনি।বেলেঘাটায় অনশন করেছিলেন তিনি।
এই ক্ষুদ্র জনপদেও দাঙ্গার বিরুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি স্পলডিং ময়দানে সভা করেছিলেন।

গান্ধীজি চরকায় সুতো কাটতেন,রামধুন গাইতেন,
রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
তিনি যাদের ভালোবাসতেন তারা নাকি ক্ষমতায়নের জন্য তাঁকে না জানিয়ে শলাপরামর্শ করে
মধ্যরাত্রে দেশের বুকের উপর লম্বা করাত রেখে দুফালা করে ফেলেন।
হাতে কাটা সুতো,খাদি আন্দোলন গান্ধীজির পছন্দ ছিল।
খাদ মেশানো লোকেরাই সরকারি ভর্তুকিতে
এখন খাদির দোকানের মালিক।

গান্ধীজি এখন রাজনৈতিক পণ্য—
গান্ধীজির নামে এখন অনেক প্রকল্প।
গান্ধীজি এখন বাণিজ্যিক ব্র‍্যান্ড—
গান্ধীজির নামে টুপি পর্যন্ত বাজারে চালু,
অথচ গান্ধীজি কোনোদিনই টুপি পরেননি।
স্বচ্ছ অভিযানে গান্ধীজি,
ভারতীয় মুদ্রায়-নোটে গান্ধীজি,
নেতারা যারা ঘুষ হিসেবে এই টাকা নেন
তারা বলেন এতে কোনো পাপ নেই
কারণ এতে গান্ধীজির ছবি রয়েছে।

গান্ধীজি নিশ্চিত খুব খারাপ লোক ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, গান্ধী মহারাজ কবিতা।
কমিউনিস্ট কবি সুকান্ত লিখেছেন, মহাত্মাজীর প্রতি কবিতা—রক্তে বেজেছে উৎসব,আজ হাত ধরো গান্ধীজী।
লেনিনের পার্টি ছিল, হিটলারের পার্টি ছিল
গান্ধীজির কোনো পার্টি ছিল না
তার নামে এতো মানুষের ঢল
নামতো কেন,
কেন হাজার হাজার মানুষ নেমে পড়তো পথে!
আজ পর্যন্ত এর উত্তর দিতে
পারে নি কেউ,এ এক আশ্চর্য বিস্ময়।

যারা শ্রীরামকে ভালোবাসেন তারাই নাকি তাঁকে গুলি করে মেরেছিল।
মানুষটির মুখ দিয়ে তখন যে শব্দটি বেরিয়েছিল, তা হল হা,রাম!
হারামখোরদের কান্ডকারখানার এই মিশ্র জলবায়ুর দেশে
গান্ধীজি খারাপ,ভালো যাইহোক
তাঁকে সামনে রেখে
করে-কম্মে খাওয়া যায়,
দেশ নেতা হওয়া যায়,
এটাই গান্ধীজির উপকারিতা
আর…আর…
এটাই সবচেয়ে বড় অপকারিতা!!