অবতক খবর,১২ সেপ্টেম্বর::  বামপন্থী রাজনীতি মানুষকে উদার হতে শেখায়। ‌ মানুষ উত্তেজিত করার চেষ্টা করলেও কোন বামপন্থী নেতা ধীর স্থির স্বভাব বৈশিষ্ট্যে মানুষের কাছে পৌঁছাতে চায়। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ আজ কাঁচরাপাড়া ‘সরগম’ সংস্থার আয়োজনে এক রক্তদান শিবিরে এসে সাংবাদিকের মুখোমুখি হয়ে এত উত্তেজিত হয়ে পড়লেন কেন?

সাংবাদিকরা তাঁর কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করে তাকে তো কাবু করতে চাইবেনই। তিনি উত্তেজিত হবেন কেন? শিক্ষক এবং বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে পরিচিত একজন যার বাস্তবতাবোধ অত্যন্ত প্রখর, তিনি এত অধৈর্য্য, এমন উত্তেজিত হবেন কেন?

ভারতবর্ষের স্বাধীনতার প্রশ্নে নিশ্চিতভাবে কমিউনিস্ট পার্টি বলেছিল,ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়। তারা পরবর্তীতে সংশোধন করে নিয়েছেনা বলে তিনি দাবী করেন । কিন্তু যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তার দলের সম্পাদককে নতুন করে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার বার্তা দিতে হলো কেন ? তার দায়িত্ব কার ? রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তড়িৎ তোপদারের যে দায়িত্ব ছিল, তিনি তাঁর লোকসভায় কি সেই বার্তা পৌঁছাতে পেরেছেন? তিনি যেভাবে আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাকে নাজেহাল করার চেষ্টা করেছেন, নিজেকে বিশাল শিক্ষিত প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তিনি কি ব্যবহারিক জীবনে ততটা শিক্ষিত? প্রতিদিনের সৌজন্যে পাওয়া এক ভিডিও তে এক সাংবাদিক তার মন মোতাবেক প্রশ্ন না করায় তিনি তার শিক্ষা দীক্ষা ভুলে প্রকাশ্যে গালিগালাজ শুরু করে দেন। শুনুন

তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে ৬ বার সাংসদ হয়েছেন, কিভাবে হয়েছেন, তা ব্যারাকপুর লোকসভার অন্তর্গত মানুষরা জানেন। ‌ তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে কাদের কাদের সাহায্য নিয়েছেন, কৃষি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তিনি কিরূপ আচরণ করেছেন, পুলিশ কে কাজে লাগিয়ে কি কি কাজ করেছেন ও সমস্ত জুট শিল্পকে কি ভাবে শেষ করেছেন তা সকলেই জানেন। তিনি ৬ বারের সাংসদ মানে ৩০ বছরের সাংসদ, সেই হিসেবে তিনি ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে জনগণের স্বার্থে কতটুকু কাজ করেছেন,আজ নিশ্চিতভাবে মানুষ জানেন।

৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও মানুষ বামপন্থীদের কাছ থেকে সরে যাচ্ছেন কেন? আজ অবতক যে সাক্ষাৎকারে তার আচরণের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হচ্ছে। ক্ষমতার অহংকারে মত্ত হয়ে পুলিশের গায়েও হাত তুলেছেন আর আজ ক্ষমতা হারিয়েও এইরকম সামন্ততান্ত্রিক মেজাজ।
প্রশ্নের উত্তর নদিতে পেরে সাংবাদিককে হেয় করা, ছোট করা, গালিগালাজ করা তার আচরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তথাকথিত বামপন্থী নেতারা মানুষ বা সমাজের কি ভালো করবেন এটা মানুষ বুঝাতে পারছেন ।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন ,স্বাধীনতা দিবস পালন বামপন্থীরা করেননি। কেন পালন করেছেন বিশেষ করে এই ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস, তার জবাব তিনি দিয়েছেন। তাতে এটা পরিস্ফুট যে জনগণ বারবার ব্যতিব্যস্ত করছেন বলেই তারা জাতীয় পতাকাকে সম্মান করতে বাধ্য হচ্ছেন। পার্টি অফিসে জাতীয় পতাকা তুলেছেন। বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে জনগণের চাপের কাছে পরাস্ত হয়ে তারা জাতীয় পতাকা তুলছেন। তারা যে এখনো মন থেকে জাতীয় পতাকাকে মেনে নেননি তার কথায় পরিষ্কার।

তিনি বলছেন সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা তোলা যেতে পারে, পার্টি অফিসে তোলা বাধ্যতামূলক নয়। সেটা অহেতুক। তাহলে তারা তুলছেন কেন? তিনি তার দলের পলিট ব্যুরোর সিদ্ধান্ত কে ও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি তার দলের কাছে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করছেন না কেন ? এটা কি ধরনের বামপন্থী চেতনা? এই প্রশ্ন মানুষের মধ্যে জেগেছে।

তিনি কাঁচরাপাড়া অঞ্চলকে চেনেন। কিভাবে চেনেন? তিনি “সোপান” ও ‘প্রবাহ’ সংগঠনের উপর ভিত্তি করেই এই বীজপুর অঞ্চলকে চেনেন। ‘প্রবাহ’ এই সংস্থা তাঁকে মাথায় তুলে রেখেছিল। তার ভিত্তিতে তিনি বীজপুর অঞ্চলে বিশেষ করে খবরদারি চালাচ্ছিলেন। আসলে জনগণের মধ্যে থেকে যে কাজ করা দরকার, সেই কাজ কতটুকু করেছেন সাংবাদিক এই প্রশ্নটি করেননি। তিনি বলতে পারবেন, এই ৩০ বছর সাংসদ থাকাকালীন ব্যারাকপুরের জনগণের স্বার্থে কোন কোন কাজ তিনি করেছেন? রাজনৈতিক বক্তব্য বাদই দেওয়া হোক।

এইসব নেতাদের আচরণের কারণেই মানুষ বামপন্থী চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছেন। আজকের যে সাক্ষাৎকার অবতক দেখিয়েছে তাতে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে। বামপন্থীদের কত উদার হওয়া উচিত। মানুষের কাছে কত বিনীত ভাবে যাওয়া উচিত। তাদের পাশে থাকা উচিত, সেসব তিনি অনেক আগেই ক্ষমতার দম্ভে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। তিনি সব ভুলে গিয়ে নিজের সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব এখনও বজায় রেখে চলেছেন। রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া বলা, নেতাজিকে তোজোর কুকুর, কুইসলিং বলা যে ভুল হয়েছিল। তাই তা একবার নয় বারবার, হাজার বার বলে মানুষের কাছে প্রমাণ দিতে হবে যে তারা দেশপ্রেমিক। সাংসদগিরি চলে গেলেও প্রচুর টাকার পেনশনের নিরাপত্তা থাকায় সেই জমিদারির মেজাজ হারাননি সাংসদ।

রাজ্যে তারা শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে তাই মানুষের প্রশ্ন কবে শিখবেন এই সমস্ত বামপন্থী সাইনবোর্ড লাগানো নেতারা? তারা মানুষকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, এর জবাব দেবে কে? পার্টিকে এর জবাব দিতে হবে ?