অবতক খবর / রঞ্জন ভরদ্বাজ : হাজিনগর হুকুমচাঁদ জুটমিল, এই জুটমিলের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। কিন্তু আজকের এই দুঃসময়ে তারা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। লকডাউন শুরু হওয়ার সময় থেকেই এই জুট মিল বন্ধ। অন্যান্য শ্রমিকদের তুলনায় রোজ মজুরি হিসেবে যে শ্রমিকরা কাজ করেন তারা আজ না খেয়ে মরতে বসেছে। তারা কি খাবেন, তাদের পরিবারকে কিভাবে খাওয়াবেন ,তাদের চলবে কীভাবে এই চিন্তায় ঘুম উড়েছে তাদের। এই নিয়ে মালিকপক্ষের তরফ থেকে কোনও সদুত্তর মিলছে না। তাই তারা জুটমিলের গেটের সামনে দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

হাজিনগর হুকুম চাঁদ জুট মিলে প্রায় ৮ হাজার দিনমজুর রয়েছেন। কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার বারবার বলছেন মালিকপক্ষ যেন তাদের শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দেন। ‌ কিন্তু জুটমিল কর্তৃপক্ষ এতে কোন কর্ণপাত করছেন না এবং শ্রমিকদের কথা ভাবছেন না। হাজিনগর হুকুমচাঁদ জুটমিলে এই নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল জুট এন্ড টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন

এই ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দিনমজুর শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আরে এই ইউনিয়নের সভাপতি নির্মল ঘোষ। এর পাশাপাশি তিনি তৃণমূলের ব্যারাকপুর লোকসভার পর্যবেক্ষক ও বিধায়ক। আর এই কমিটির এডভাইসর রয়েছেন সুবোধ অধিকারী। আজ প্রায় ১২ দিন ধরে চলছে এই আন্দোলন। আর এই আন্দোলনেও মিল মালিকের হুঁশ ফিরছে না।

কর্মীরা প্রতিদিন সকালে আসেন এবং করোনার যথাযথ বিধি নিষেধ পালন করে তারা এই আন্দোলন করেন গেটের সামনে। তাদের একটাই দাবি, কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার যেমন নির্দেশ দিয়েছেন সেই নির্দেশ অনুযায়ী তাদের বেতন দিতে হবে। সেই আশায় তারা প্রতিদিন বসে থাকছেন যে, কখন জুটমিল মালিক বাইরে বেরোবেন এবং তাদের বেতন দেবেন। তবে এই দিনমজুর শ্রমিকদের জন্য একটি সুখবরও রয়েছে।

এই ১২ দিন ধরে তারা যেভাবে লড়াই করছেন তাদের পাশে একভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুবোধ অধিকারী। তিনি এই শ্রমিকদের কথা শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য আরো নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যাতে এই মজদুর শ্রমিকরা বেতন পান। তিনি প্রতিদিনই উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তিনি জানান, ‘জুটমিল কর্তৃপক্ষ যেভাবে শ্রমিকদের শোষণ করছেন, এটা আমরা হতে দেব না। এই দুঃসময়ে উচিত জুটমিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়ানো। কারণ এটা কোন বনধ্ বা ধর্মঘট নয়। একটি মারণ ভাইরাসের কারণে আজ গোটা বিশ্ব ভুক্তভোগী। যেখানে বড় বড় কোম্পানির মালিকরা শ্রমিকদের বেতন দিয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সেখানে জুট মিল কর্তৃপক্ষ কেন তাদের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবে না! তিনি জুট মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। যাতে তাদের পাশে তারা দাঁড়ান।

তিনি বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব শিগগিরই শ্রমিকদের জন্য সুখবর আসবে এবং তারা বেতন পাবেন।’ অন্যদিকে এই জুটমিলের জয়েন্ট সেক্রেটারি তাপস গুপ্তা জানান, সরকার ঘোষণা করেছেন,যে কারখানায় ১০০ জনের অধিক শ্রমিক কর্মরত তাদের যে পিএফ রয়েছে, সেই পিএফ থেকে তাদের টাকা দেওয়া হোক। কিন্তু আমরা দাবি করছি পিএফ থেকে আমরা কেন টাকা তুলব? কারণ পিএফ হল ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়। সেই অর্থ যদি আমরা এই সময় ব্যয় করে দিই, তাহলে আমাদের ভবিষ্যতে কি হবে? তাপস বাবু জানান, জুটমিল কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোন হেলদোল দেখছি না আমরা।