অবতকের বিশেষ প্রতিবেদনঃ

হালিশহরের রামপ্রসাদ ভিটেঃকালী খেকো

তমাল সাহা

লোকটির খুব খিদে পেয়েছিল। সে ছিল মা খেকো। খিদের কারণে সে বলেছিল-এবার কালী তোমায় খাব। লোকটির চাষা আবাদ সম্বন্ধেও জ্ঞান ছিল। সে বলত-এমন মানব জমিন রইল পতিত, আবাদ করলে ফলতো সোনা। লোকটা কি একটু লোভীও ছিল? সম্পদের প্রতি অভিনিবেশ ছিল! কি সেই ঐশ্বর্য? দে মা আমায় তবিলদারি! এ তো চৈতন্যের তবিলদারি! অবশ্য এখন বেঁচে থাকলে লিখতেন-দে মা আমায় প্রোমোটারি।

প্রাজ্ঞ পঞ্চজনের কাছে ভ্যানতাড়া করে লাভ কি? ঠিক ধরেছ গো! রামপ্রসাদের কথাই বলছি। ১৭২০ খ্রিস্টাব্দের কথা। রামপ্রসাদের ভিটে বললেই আমাদের মনে অহংকার গো! অহংকার হয়। আর সিদ্ধ পীঠ! সে তো এক কঠিন কর্মযজ্ঞি। পঞ্চবট পুঁতে হয়। পূর্বে অশ্বত্থ, পশ্চিমে বট, উত্তরের বিল্ব, দক্ষিণে আমলকি, অগ্নিকোণে অশোক। পঞ্চমুণ্ডের আসন বানাতে হয়। দুটো চণ্ডালের, একটি শেয়ালের,একটি বানর, আর একটি সাপের মাথা চাই। তারপর লক্ষ বলিদান করতে হয়। এতেই কি চুকে যায়! তারপর কোটিবার হোমযজ্ঞ ও কোটিবার মহাবিদ্যার নাম জপে হ্যাপা আছে। তবেই না হবে সিদ্ধাসন।

এসবই আমাদের লোকসম্পদ। সবই আছে আমাদের বীজপুরে-হালিশহরে। সেই গল্প মনে পড়ে। বাপ-মেয়ের বেড়া বাঁধার গল্প। বেড়া বাঁধার দড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছেন জগ্গজননী। মেয়ে হয়ে বাপের হাতে।

রামপ্রসাদ তো মাকে নিয়েই মরণ ডুব দিয়েছিল ভাগীরথীর জলে। দেওয়ালি অমাবস্যার পরদিন। সে তো ১৭৮১। তখন থেকেই এখানে কালী পুজো হয়ে আসছে। তারপর ১৮৮৫ সাল। সেখানে শুরু হল মাতৃপূজা। এতে রামপ্রসাদের বংশধর আশারঞ্জন সেনও অংশ নিয়েছিল। মূল ভূমিকা নিয়েছিল পূর্ণিমা ব্রত সমিতি। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দ। এই সমিতি গুডউইল ফ্রেটারনিটির সঙ্গে মিলে গেল। তখন তারাই পুজোর দায়িত্ব নেয়। বর্তমান দেবী বিগ্রহটি গুডউইল ফ্রেটারনিটি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে স্থাপন করে। আজকের রামপ্রসাদের ভিটে, নাটমন্দির নির্মাণের পেছনে রয়েছে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে দিননাথ গঙ্গোপাধ্যায়,১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও নরেশ চন্দ্র দত্ত, ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে অধ্যক্ষ জ্ঞানরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি,১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, সত্যচরণ গুপ্ত ও পুলিনবিহারী ভট্টাচার্য, ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ডঃ শ্যামাপদ চট্টোপাধ্যায় এবং শ্রীমতী কিরণশশী দেবীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। এইসবই আমাদের লোকজীবন-লোকগাথার উত্তরাধিকার।