অবতক খবর,১৯ নভেম্বরঃ মৃণাল সিংহ রায়, যাকে বীজপুরের মানুষ আবুদা বলেই চেনেন। আর এই আবুদার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যে নাম জড়িয়ে রয়েছে তিনি হলেন চয়ন বোস। হালিশহরের মানুষ এক ডাকে চিনতেন চয়ন বোসকে। হালিশহরের পুরনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা রয়েছেন তারা হয়তো চয়ন বোসকে কখনোই ভুলতে পারবেন না। হালিশহরে চয়ন বোসের নামাঙ্কিত একটি ক্লাবও রয়েছে।

প্রতিবছর ১৯শে নভেম্বর চয়ন বোস স্মৃতিরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে ভারতের প্রাক্তন তথা প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন পালিত হয়। ‌ এই অনুষ্ঠানটির সূচনা করেছিলেন চয়ন বোস নিজে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে একটি দুর্ঘটনায় চয়ন বোসের মৃত্যু হলে ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিনে তাঁর ছবিও সাথে রেখে তাঁকে স্মরণ করা হতো। যেহেতু হালিশহরে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন তিনি এবং মৃণাল সিংহ রায় শুরু করেছিলেন, সেই কারণে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে সসম্মানে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হতো এবং অনুষ্ঠান পালন করা হতো। ২০২১ সাল পর্যন্ত একইভাবে চলছিল এই অনুষ্ঠান।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে চয়ন বোস স্মৃতি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে ইন্দিরা গান্ধী, মৃণাল সিংহ রায় এবং চয়ন বোসের একটি করে আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হয় স্মৃতি রক্ষা ভবনে।

১৯৮৩ সালে যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন চয়ন বোস। এরপর তিনি ১৯৮৬ সালে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান এবং পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৮৮ সালে টাউন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন। মৃণাল সিংহ রায় এবং চয়ন বোস বীজপুরের বহু মানুষকে চাকরি দিয়েছিলেন। সেই কথা কখনোই ভুলতে পারবেন না বীজপুরের মানুষ।

তবে এবার চয়ন বোসের মৃত্যুর ২৬ বছর পর শুরু হয়ে গেল তাঁকে নিয়ে রাজনীতি। ১৯শে নভেম্বর ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে যে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে সেখানে নাকি চয়ন বোসের নাম উল্লেখ করা যাবে না। কিন্তু ১৯শে নভেম্বরের অনুষ্ঠানে চয়ন বোস মারা যাওয়ার পর থেকে অর্থাৎ ১৯৯৭ সাল থেকে মৃণাল সিংহ রায় এই অনুষ্ঠানে চয়ন বোসের নাম, তাঁর ছবি রেখে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো শুরু করেছিলেন। এত বছর এই ভাবেই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।

কিন্তু এ বছর বেশ কয়েকজন প্রস্তাব করেছে যে, আর চয়ন বোসের নাম এবং ছবি ব্যবহার করা যাবে না। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করেছেন বেশ কয়েকজন।

উল্লেখ্য, চয়ন স্মৃতি ভবনের নাম দিয়েছিলেন আবুদা। এমনকি ২০০৯ সালে চয়ন বোসের নামে একটি অ্যাম্বুলেন্সও চালু করেন আবুদা।

সূত্রের খবর,প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি প্রচারের ব্যানার ছড়িয়ে পড়ে যেখানে চয়ন বোসের নাম বা ছবি কোন কিছুই ছিল না।

আর এই খবর যায় দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে।

পরবর্তীতে প্রচারের ব্যানারে চয়ন বোসের নাম এবং ছবি দেওয়া হয়।

১৯শে নভেম্বরের অনুষ্ঠানে চয়ন বোসের স্ত্রী কথাশ্রী বোসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু নিজের স্বামীর এই অপমান মেনে নেননি তিনি। ১৬ই নভেম্বর রাতে চয়ন স্মৃতিভবনে গিয়ে তিনি তাঁর স্বামী অর্থাৎ চয়ন বোসের যে একটি ছবি ছিল তা নিয়ে চলে আসেন।

এইসব ঘটনা দেখে চয়ন বোসের পুত্র জানান, ‘চয়ন বোসের এইসব পাবলিসিটির কোন প্রয়োজন নেই। কারণ হালিশহরের মানুষ কখনোই চয়ন বোসকে ভুলতে পারবে না। তাতে চয়ন বোসের ছবি,নাম কোথাও থাকল কি থাকল না তাতে কিছু যায় আসে না।’

২৬ বছর আগে যে মানুষটি মারা গিয়েছেন, এবার তাঁকে নিয়েও হালিশহরে শুরু হয়ে গেছে রাজনীতি! এইসব দেখে হালিশহরের মানুষ বলছেন,রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এইরকম নোংরা রাজনীতি কাম্য নয়।

অন্যদিকে এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন চয়ন বোসের পরিবার এবং তাঁর অনুগামীরা। তারা বলছেন,চয়ন বোসের এইরকম অপমান আমরা মেনে নেব না।