এবার একটু অন্যরকমের লেখা লিখি। দেখুন ভোটের পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য আছে কি না।

হাতজোড়
তমাল সাহা

জনতা সফরে বেরিয়ে পড়েছে দুই প্রার্থী। হাতজোড় করে তারা হেঁটে চলেছে রাস্তা ধরে। রাস্তায় লোক জড়ো হয়ে গেছে। টুকুনকে টিউশন পড়িয়ে তার মা ফিরছে ঘরে।

মা, ও হাতজোড় করে হাঁটছে কেন? ও কি কোনো অন্যায় করেছে?

না, টুকুন। উনি জনতাকে নমস্কার জানাচ্ছেন। উনি ভোটে দাঁড়িয়েছেন।

মা! জনতা কি ভগবান?

হ্যাঁ। ভগবানের চেয়েও বড়।

মা দেখো, ভগবান তোমায় পাপ দেবে?

কেন?

মানুষ কি কখনও ভগবানের চেয়েও বড় হয়?

হয়।

কিভাবে?

ভগবান যা পারেনা, মানুষ তা পারে।

কি পারে?

মানুষ ওঁকে ভোটে জিতিয়ে দিলে উনি কোটি কোটি টাকা, পয়সা, বাড়ি, গাড়ি, এন এস সি, এল আই সি- র মালিক হতে পারবেন। পুকুর ভরাট, বালি খাদান থেকে আয় করতে পারবেন। এখনকার ভাষায় এটিকে কামাই বলে।

মা! তুমি জানলে কি করে?

প্রতিবার ভোটের সময় উনি হলফনামা জমা দেন তো! তা দেখে।

ওঁর গাড়ি আছে, তবে হাঁটছে কেন? পা ব্যথা হয়ে যাবে না?

পাঁচ বছর গাড়ি চড়ে চড়ে শরীরে মেদ জমে গেছে তো! তাই এখন হেঁটে মেদ ঝরাচ্ছে। ব্যায়ামও হলো। জনসংযোগও হলো।

মা! তবে এখন জনসংযোগ করছে কেন? পাঁচ বছর ধরে এত জনসংযোগ করেনি কেন? এতদিন তো আমরা ওনার বাড়ি গিয়ে একটা শংসা পত্রের জন্য হাতজোড় করেছি।

হুঁ। ঠিক বলেছিস। ওঁদের এটা ভোটের সময় করতে হয় মা। মর্নিং ওয়াক মর্নিংয়েই করতে হয়। দুপুরে করলে তো আর হবে না। এই জনসংযোগ তো কামাইয়ের জনসংযোগ তাই ভোটের সময় করতে হয়।

ভোট কথাটা এসেছে ভেট থেকে। ভেটের আসল মানে হচ্ছে কামাই। ভগবান এটা পারে না।

রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দকে কালীর কাছে টাকা, সম্পদ চাইতে বলেছিল। বিবেকানন্দও পারেনি।

মা! তাহলে আমার বাবা ভোটে দাঁড়ায় না কেন?

তোমার বাবার ভোটে দাঁড়ানোর মুরোদ আছে! তোমার বাবা যা ম্যাদামারা! সে আবার ভোটে দাঁড়াবে? আমাকেই বোঝাতে পারে না, আবার জনতাকে বোঝাবে!

মা! আমি বড় হয়ে ভোটে দাঁড়াবো!
ভোটে দাঁড়াতে কী কী লাগে মা?

ভোটে দাঁড়াতে তিনটি জিনিস লাগে– পার্টি, পেশি, পয়সা।

মা! পার্টি, পয়সা তো বুঝলাম। পেশি কি?

পেশি মানে হলো মস্তান। মস্তান লাগে। মস্তানের ভালো ভাষা হলো ক্যাডার। ওদের দেখে মানুষ ভয় পেয়ে মানে ডরে ক্যা ক্যা করে তাই ওদের ক্যাডার বলে। ক্যা ক্যা আর ডর শব্দ মিশে হয়েছে ক্যাডার।

ও মা! মা! ও যে হাঁটছে, কোন ব্যায়াম করছে? যোগ ব্যায়াম, না ডাম্বল নিয়ে ব্যায়াম? মানে রামদেব ওর গুরু না কি মনোহর আইচ?

ওর গুরু রামদেব।

রামদেব কেন?

যে ব্যায়াম করলে ধন-সম্পদ বাড়ে মানে যোগ হয় তাকে যোগ ব্যায়াম বলে। তাই উনি যোগ ব্যায়াম করেন। বিয়োগ ব্যায়ামে উনি নেই।

মা! এত খুব কঠিন কাজ!

হ্যাঁ। কঠিন তো বটেই। পড়াশুনো না করলেও এইসব গুণ থাকলে কেউ নেতা হতে পারে। মন্ত্রী হতে পারে।

মার কথা শুনে টুকুনের চোখ তো চড়কগাছ! মা বাড়িতে ঢুকতেই টুকুন ঢিপ করে মা-কে প্রণাম করলো।