অবতক খবর,১৭ জুনঃ হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও নিজেদের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী দিতে পারলো না বিজেপি।

আদালতের নির্দেশ ছিল ৬০ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবেন অথচ বিজেপি মনোনয়ন দিল মোট ৩৫।

বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতার ছবি আরো একবার প্রকাশ পেল।

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও প্রার্থী দিতে পারলো না বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকেই কখনো সন্ত্রাস, কখনো ভয় দেখানো আবার কখনো মনোনয়ন দিতে না দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা এরকম বিষয়গুলো নিয়ে সরব হয়েছিল বিজেপি। মনোনয়ন তারা দিতে পারছেন না এই অভিযোগ নিয়ে তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টেও। শুক্রবার সেই মামলার রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। সেই রায়ে উল্লেখ ছিল বসিরহাটের সন্দেশখালি ১ ও ২ নং, হাড়োয়া ও মিনাখাঁ ব্লকের যে সমস্ত বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি সেই ৬০ জন প্রার্থী ১৬ই জুন শুক্রবার বিকাল ৪টের মধ্যে বসিরহাট মহকুমা শাসকের দপ্তরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। এই রায় পাওয়ার পরে যথেষ্টই খুশির হাওয়া বইছিল বিজেপি নেতা, কর্মী ও প্রার্থীদের মধ্যে। শুক্রবার আদালতের রায় জানার পরেই একে একে বিজেপির প্রার্থীরা বসিরহাট মহকুমা শাসকের দপ্তরে এসে জড়ো হন। তারপর শুরু হয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া।

হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল শুক্রবার ৬০ জন বিজেপি প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। অথচ বিজেপি ঐ চারটি ব্লক মিলে মোট ৪১ জন প্রার্থীকে জোগাড় করতে সক্ষম হয়। সেই একচল্লিশ জন মহকুমা শাসকের দপ্তরে এসে ডিসিআরও কাটেন। অথচ তার মধ্যে থেকেও ৩১ জন মনোনয়ন জমা দেন গ্রাম পঞ্চায়েতে ও বাকি চারজন জমা দেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। অর্থাৎ মোট ৩৫ জন বিজেপি প্রার্থী নমিনেশন দেন। অপরদিকে হাইকোর্টের যেহেতু নির্দেশ ছিল চারটের পরে কোনরকম মনোনয়ন গ্রহণ করা হবে না। সেই নির্দেশ মত বন্ধ করে দেওয়া হয় বসিরহাট মহকুমা শাসকের দপ্তরের মূল গেট। তা জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি নেতারা। তারা বলেন, “তাদের সাথে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। যার ফলে বেশকিছু বিজেপি প্রার্থী মহকুমা শাসকের দপ্তরে ঢুকতে পারেননি।” মনোনয়ন জমা দিতে না পারা প্রার্থীরা জানান, তারা কেউ মনোনয়ন সংক্রান্ত নথি জেরক্স করতে, কেউ আবার ফটো তুলতে আবার কেউ শৌচকর্মের জন‍্য বাইরে গিয়েছিলেন।

কিন্তু তারা চারটের মধ্যে ফিরতে পারেননি। যার ফলে তারা মহকুমা শাসকের দপ্তরে আর ঢুকতে পারেননি। এবিষয়ে বিজেপির বসিরহাট সংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস ঘোষ মনোনয়ন কম জমা পড়ায় একপ্রকার সাংগঠনিক দুর্বলতাকে মেনে নিয়ে বলেন, “আমরা কম সময়ের নোটিশে এই মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলাম। সন্দেশখালি, হাড়োয়া বা মিনাখাঁ থেকে বসিরহাটে আসতেই প্রচুর সময় লেগে যায়। সেই সময়ের সময়ের মধ্যে আমাদের অনেক প্রার্থী এসে পৌঁছাতে পারেনি। পাশাপাশি যারা পৌঁছেছিল তাদের নথি জেরক্স সহ অন্যান্য অফিসিয়াল কাজ করতে তারা একটু বাইরে গিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় গেট। যার ফলে তারা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি।”

অপরদিকে বিজেপির এই মনোনয়ন জমা দিতে না পারাকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার আইএনটিটিইউসির সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, “বিজেপির কোনো সংগঠন নেই, জনসমর্থন নেই। নিজেরাই প্রার্থী খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার একটি এক্সট্রা ডেট হাইকোর্টের নির্দেশে পাওয়ার পরেও তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত টার্গেটে সফল হতে পারেনি। আসলে ওরা প্রার্থীই জোগাড় করতে পারেনি। তাদেরই সাংগঠনিক ত্রুটি রয়েছে। সেই জন্য তারা শাসক তৃণমূলকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে।”

সন্ত্রাস অথবা ভয়ের কারণ দেখিয়ে বিজেপি বলছিল তাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন দিতে পারছে না। অথচ হাইকোর্টের নির্দেশে একদিন বেশি সময় পেয়েও তারা ৬০ জনের জায়গায় মাত্র ৩৫ জন মনোনয়ন জমা দিতে সক্ষম হলেন। তাহলে এখনও তৃণমূল স্তরে বিজেপির সাংগঠনিক দুর্বলতা যে রয়েছে সেই ছবি আরও একবার উঠে এলো।