বিনয় ভরদ্বাজ, অবতক খবর :: মারণ করোনাভাইরাস আতঙ্কে বেকাবু সারা বিশ্ব। চলছে দেশজুড়ে লকডাউন। কোটি কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা হচ্ছে। সংক্রমণ রুখতে সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করতে মরিয়া রাজ্য সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্র সরকার সকলে। তখন নদীয়ার এক মিট কারখানার কর্মীরা প্রস্তুত সংক্রমণ আরো বেশি করে ছড়াতে । সোজা কথায় করোনাভাইরাস জলজ্যান্ত কারখানা চলছে নদীয়ার হরিণঘাটায়।

সম্পূর্ণ দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যে রাজ্যে 144 ধারা জারি করে মানুষকে জড়ো হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এক সঙ্গে মেলামেশা ও একজোট হয়ে যাওয়া যাতে না যায় সেই বার্তা রাজ্য থেকে কেন্দ্র সকলেই বারেবারে দিচ্ছেন।

তেলেঙ্গানা মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে লকডাউন অমান্যকারীদের  দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ জারি করেছেন। পুলিশ রাস্তায় বেরোলে লাঠিপেটা করে ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কারণ এখন মানবজাতিকে বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাতে, না চাইলেও বল প্রয়োগ করতে হচ্ছে পুলিশকে, কঠোর হতে হচ্ছে প্রশাসনকে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর কাছে বারে বারে ঘর থেকে বেরোতে বারণ করছেন, রোগ সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় তার জন্য সোশ্যাল দূরত্বের বা আইসোলেশন-এর কথা বারেবারে বলছেন ।

শুধু তাই নয় গত 15 ডিসেম্বর থেকে CAA, NRC বা এনপিএ নিয়ে আন্দোলন বিক্ষোভে শামিল শাহিনবাগের দীর্ঘদিন ধরে যে আন্দোলন চলছিল সেটাও কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে জোর করে পুলিশ তুলে দিয়েছে।

এতসবের পরেও পশ্চিমবঙ্গে এক মিট ফার্মে চলছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ তৈরীর কারখানা। হ্যাঁ এটা শুনতে খুব খারাপ লাগছে। আপনাদের মনে হতেই পারে কিন্তু এটাই সত্যি। সংক্রমণ এখান থেকে যেকোন সময় রাজ্য ও দেশ জুড়ে ছড়াতে পারে, তা এখানকার কর্মরত শ্রমিকরা মনে করছেন । তারা যেকোনো সময় করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন ও কমিউনিটি সংক্রমণের মাধ্যমে এই ভাইরাস যেকোনো সময়ে পৌঁছে দিতে পারেন পাড়ায় পাড়ায় ও রাজ্যজুড়ে।

হ্যাঁ, যেখানে আমরা একসঙ্গে পাঁচ-সাতজন তাহলে ভয় পাচ্ছি করোনা ভাইরাস সংক্রমণে নিয়ে, ঠিক এমন সময় নদীয়ার হরিণঘাটা মিট ফার্মে একসঙ্গে প্রায় 130 জন বিভিন্ন এলাকার কর্মী একজায়গায় জড়ো হয়ে কাজ করে চলেছেন।

তাদের কাজে যোগদানের সময় বা তার আগে, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে না ।একসঙ্গে মুরগি ,খাসি ,হাঁস, খরগোশ ও শূকরের মাংস কেটে তারা প্রসেসিং করছেন ও প্যাকিং করছেন। এক জায়গায় তারা সকলে বসে জামাকাপড় ছাড়ছেনৃ এক জায়গায় রাখছেন। এখানে তারা এক জায়গায় বসে তাদের খাওয়া-দাওয়া টিফিন ও অন্যান্য কাজ সারছেন। এদের জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তাদের কোনো আপত্তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

একদিকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়, অন্যদিকে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয় দুটির মাঝে পড়ে না চাইলেও তাদের মাংস কারখানা দিন-রাত একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হচ্ছে, কোন সিকিউরিটি সুরক্ষার ছাড়াই।

এক কর্মী জানান, বাইরে আমরা একে ওপর থেকে দূরে থাকার কথা শুনছি, দেখছি মুদিখানা বা আমাদের দূরে দূরে থাকার বা আমাদের দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে, নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে কারখানায় একেবারে হুড়োহুড়ি করে গায়ে গা লাগিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমরাই আতঙ্কিত। আমরাই করোনাভাইরাস বাংলা ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট ।তবে আমাদের কথা শুনবে কে?