রে দাঙ্গা! রে ভারতবর্ষ! রে গণতন্ত্র! তুই আর মানবতাকে কত কলঙ্কিত করবি? আর কত খেটেখাওয়া মানুষ হবে দাঙ্গার শিকার!

সৈয়দ সাজিয়া
তমাল সাহা

গণতন্ত্রের পতাকা ছুঁয়েছে আকাশ,
স্বাধীনতার গায়ে লেগেছে
তিয়াত্তর বছরের বাতাস।
রাজধানী দিল্লি জুড়ে এখন তাণ্ত্রিক উল্লাস।

সাজিয়া মেয়েটি পড়ে আছে
নিস্তব্ধ নিঃশ্চুপ শোকে পাথর।
সে জানে মৃতদেহে ছড়াবে সুগন্ধি আতর। ‌
ঘরে ফিরে আসবে প্রিয়তম সৈয়দ নয়, সৈয়দের লাশ।
সাজিয়া আশাহত,ঘনঘন পড়ে তার শ্বাস।

তরুণ অটোচালক সৈয়দ–
সারাদিন খাটে,বারোমাস।
রৌদ্রে ঘামে, জলে ভিজে
জোটায় কোনোমতে দুটি মুখের গ্রাস।

সৈয়দ সাজিয়াকে ভালোবাসে
সেই কিশোর বয়সে।
স্বপ্ন দেখেছিল বাঁধবে সংসার
ফুটফুটে শিশু নিয়ে খুনসুটি হবে
মেতে থাকবে তারা দুই স্বামী-স্ত্রীর পরিবার। ‌

উত্তর প্রদেশ–
বুলন্দশহর ছেড়ে চলে এসেছিল তারা।
ভেবেছিল পেটের একটা হবে কিনারা।
দিল্লি তো রাজধানী,
সে নিশ্চিত দেবে কোনো সাহারা। ‌

চাঁদবাগ বাজারের পাশে
ছোট্ট একটি কুঠি নিয়েছিল তারা– বাড়িভাড়া।
তখন কি জানত দাঙ্গা একদিন করবে পিছুতাড়া!

সাজিয়ার কানে ভেসে আসে
ভালবাসার সেই কণ্ঠস্বর—
ভাড়া আছে, দেরি হবে ফিরতে ঘরে।
রে সাজিয়া! তু খা লে জলদি,
পেট মে বাবু হ্যায় ভুখারে!

সাজিয়ার গর্ভে চার মাসের শিশু নড়ে ওঠে,
পেট উঁচিয়ে আছে।
মৃত পিতাকেও সে পাবে নাকো কাছে।

ভূমিষ্ঠ শিশুর কি হবে পরিচয়?
সে জানবে কোনোদিন তারও বাপজান ছিল–
ভারতবর্ষে তার নিজের দেশে
একদিন দাঙ্গার শিকার হয়।

শুনে সে লজ্জায় মাথানিচু করে থাকে।
ভারতবর্ষ! বলে ডুকরে কেঁদে ওঠে
জড়িয়ে ধরে মাকে।